বিনোদন

৫০০ রুপি বেতনে চাকরি করা মণীশই এখন বলিউডের ফ্যাশন-গুরু

সাধারণ মানুষ আইকন মানে যে বলিউড তারকাদের, সেই তারকাদের কাছে আইকনিক নাম মণীশ মালহোত্রা। বিয়ে হোক কিংবা বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। ছোটখাট পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে কানের লালগালিচা। যেখানেই যাবেন, দীপিকা পাড়ুকোন, কারিনা কাপুর, আনুশকা শর্মাদের পোশাক-সাজসজ্জার জন্য মণীশ মালহোত্রারই শরণাপন্ন হতে হয়।

Advertisement

তারকা-মহাতারকাদের সাজ-পোশাকের দায়িত্ব যিনি সামলান, সেই মণীশ আসলে মানুষ কেমন? তার অতীত কী? কী তার আনন্দ-বেদনা, জীবনের গল্প? এসব বিষয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

মুম্বাইয়ের পাঞ্জাবী পরিবারের ৫৩ বছর বয়সী এ ফ্যাশন-গুরু জানান, শৈশব থেকেই তার বলিউড-প্রীতি। লুকিয়ে-চুরিয়ে সত্তর-আশির দশকের সুপারহিট সব সিনেমা দেখেছেন তিনি। অন্যদিকে মায়ের সেলাই-ফোঁড়াই দেখে ফ্যাশনে আগ্রহ বাড়ে তার। দুই মিলিয়ে এখন তিনি বলিউডের জনপ্রিয় ফ্যাশন মাস্টার।

তবে শুরুটা এমন ফুলের বিছানা ছিল না মণীশের। তাকেও সংগ্রাম করতে হয়েছে দীর্ঘদিন। আজকের কোটিপতি মণীশ একসময় ৫০০ রুপি বেতনেও চাকরি করেছেন। নিরলস পরিশ্রমে ঝরিয়েছেন ঘাম।

Advertisement

তিনি বলছিলেন, ‘পেশাদার মডেল হিসেবে জীবন শুরু করেও বেশি আয়ের জন্য একটা বুটিক হাউসে কাজ করা শুরু করি। বেতন বাবদ পেতাম ৫০০ রুপি। কিন্তু সেই টাকায় বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা বিদেশে গিয়ে ফ্যাশনের ওপর পাঠ নেয়া সম্ভব ছিল না। আমার আঁকার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। তাই বসে পড়তাম আঁকতে। নিজে নিজেই ফ্যাশন বিষয়ক জ্ঞানার্জন করতে থাকি। আঁকতাম আর সেলাই করতাম। এভাবে ২৫ বছর বয়সে এসে প্রথম সুযোগটা পেলাম বলিউডে। তাও এমন একটা সিনেমায় (স্বর্গ-১৯৮০) কাজ করলাম, যার মুখ্য চরিত্রে ছিলেন জুহি চাওলা।’

সেই থেকে শুরু। এরপর তিন দশক ধরে বলিউডের জন্য কাজ করছেন মণীশ। তাকে নিয়ে অনেকটা কাড়াকাড়িই চলচ্চিত্রগুলোর সাজের সেটে।

তার সাজানো পোশাক-আশাক পরেই বড় বড় তারকারা দাঁড়িয়েছেন সিনেমার শুটিংয়ের ক্যামেরার সামনে।

পোশাক সজ্জায় তিনি যে সিনেমাগুলোতে কাজ করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গোমরাহ (১৯৯৩), দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫), রাজা হিন্দুস্তানি (১৯৯৬), আর্মি (১৯৯৬), হিরো নাম্বার ওয়ান (১৯৯৭), কয়লা (১৯৯৭), দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), সোলজার (১৯৯৮), কুচ কুচ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), কাহো না...পেয়ার হ্যায় (২০০০), মোহাব্বাতেন (২০০০), নায়ক (২০০১), কাভি খুশি কাভি গাম (২০০১), চলতে চলতে (২০০৩), কাল হো না হো (২০০৩), ফিদা (২০০৪), ম্যায় হু না (২০০৪), বীর-জারা (২০০৪), ফানা (২০০৬), কাভি আলবিদা না কেহনা (২০০৬), আজা নাচলে (২০০৭), ওম শান্তি ওম (২০০৭), থ্রি ইডিয়টস (২০০৯), মাই নেম ইজ খান (২০১০), বডিগার্ড (২০১১), রকস্টার (২০১১), রা.ওয়ান (২০১০), স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার (২০১২), ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি (২০১৩), চেন্নাই এক্সপ্রেস (২০১৩), বজরঙ্গি ভাইজান (২০১৫) ও থাগস অব হিন্দুস্তান (২০১৮)।

Advertisement

মণীশের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন শ্রীদেবী। তার মৃত্যু শোকাভিভূত করেছে এ ফ্যাশন আইকনকে। বলছিলেন, ‘২০১৮ সালে শ্রীদেবীর মৃত্যু আমাকে খুব নাড়িয়ে দিয়েছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ওর সঙ্গে শুধু আমার পেশাগত সম্পর্ক না, ছিল ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ওর পরিবারের একজন ছিলাম আমি। যতদিন শ্রীদেবী কাজ করেছেন, আমি ছিলাম ওর ডিজাইনার। এখন জাহ্নবী আর খুশির ডিজাইনারও আমি।’

নিজেকে কাজের মধ্যে মগ্ন রেখে বন্ধু-বিয়োগের বেদনা কিছুটা ভুলেছেন মণীশ মালহোত্রা। গত ডিসেম্বরে বলিউডে ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে এ ফ্যাশন ডিজাইনারের। সে উপলক্ষে প্রশংসা-ভালোবাসায় ভেসেছেন মণীশ। এই ভালোবাসাকেই পুঁজি করে মণীশ এগিয়ে যেতে চান আরও বহুদূর।

এইচএ/জেআইএম