দেশজুড়ে

শিক্ষার আলো ছড়ানো নয়া কৌশল!

নানা শঙ্কা আর সীমাবদ্ধতার মাঝে মূলভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন চট্টগ্রামে একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে শিক্ষা তথা শিশু শিক্ষা বিস্তারে এক অভিনব কৌশল সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশের অগ্রযাত্রায় মেধা মননে এসেছে নানাবিধ পরিবর্তন। বিশেষ করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই অবাধ অগ্রগতির যুগে সুন্দর আগামীর পথে নতুন প্রজন্মেকেও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে স্বাধীনতার শেকড় আঁকড়ে। এক কথায় নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে মাথা উঁচুর আগামী।

Advertisement

যেকোনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সে দেশের জাতীয় পতাকা। আর তাই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সাজানো হচ্ছে জাতীয় পতাকার আদলে।

ওপরের দিকে তাকালে চোখে পড়বে লাল-সবুজে ছেয়ে আছে পুরো একটি এলাকা। সবার নজর কাটছে লাল-সবুজ। রাতের আলোয় আরও ঝলমল করছে পুরো এলাকা। অনেকে থমকে দাঁড়াচ্ছেন লাল-সবুজ বেস্টনির এলাকাটি দেখে। এটি আর কিছু নয়, লাল-সবুজে বেস্টিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। যার ছোঁয়া লেগেছে সাগরকন্যা খ্যাত সন্দ্বীপের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে । বুনিয়াদি শিখনের ভিত প্রস্তুতকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে,আগামীর বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কোন পথে। ইতোমধ্যে রং-তুলির নিখুঁত আঁচড়ে সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সাজানো হচ্ছে জাতীয় পাতাকার আদলে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি কোমলমতিদের মেধা-মননে বোপিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীজ। চিরচেনা শৈশবের বিদ্যালয়গুলোকে নতুন দেখায় শিহরণ তুলছে স্বাধীনতার আবেগে। তবে কি এটা নতুন কোন বিদ্যাপীঠ? নাকি ভিন্ন বিদ্যাপীঠ এটি? না এটা আমারই শৈশবের পুরোটা সময় জুড়ে থাকা স্মৃতির অ্যালবাম স্বপ্ন বীজের সেই-ই নীড় এটি। না। কেবল খোলস নয়, ভেতরেও ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যালয়গুলোকে দেখলেই তার অবস্থান সম্পর্কে সহজেই আন্দাজ করা যায়। এতে করে কোমলমতিদের পাশাপাশি অভিভাবকমহল ও এলাকাবাসীকেও আন্দোলিত করছে। এ যেন চির চেনা বিদ্যাপীঠে এক নতুনের গন্ধ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছে তাদের অনুভূতির কথা।

Advertisement

মুছাপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা বেগম লামিয়া বলেন, আমাদের স্কুল আগে পুরাতন পুরাতন মনে হতো। রঙ করার পর নতুনই মনে হচ্ছে। বেশি ভালো লাগছে জাতীয় পতাকার রঙ করার কারণে।

দক্ষিণ পশ্চিম মুছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দিদারুল আলম বলেন, খুদে শিক্ষার্থীদের জাতীয় পতাকার রঙ শেখাতে ও মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে- এ বিষয়টি বোঝাতে বিদ্যালয়কে জাতীয় পতাকার আদলে সাজানো হয়েছে।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান বাদশা বলেন, এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের পতাকা চেনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জাতি গঠন এবং আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি সেটা তারা বুঝবে ও জানতে পারবে।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, শিশুদের স্কুলগামী করা, ঝরেপড়া রোধ, জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে শিক্ষা হাতেখড়ি দেয়ার লক্ষ্যেই আমরা এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছি। সন্দ্বীপে ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন, দরজা জানালা লাল সবুজের রং আঁকা হয়েছে। বাকিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

Advertisement

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বোধি চাকমা বলেন, জাতীয় পতাকার আদলে রং করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়েই বড় হয়ে উঠার পাশাপাশি দেশপ্রেমের সঙ্গে পরিচিত হবে আমি মনে করি।

জেএইচ/জেআইএম