ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে গত রোববার থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ২ শতাধিক। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ মুসলিমদের অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দিল্লি।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্ব দিল্লির ব্রিজপুরির অরুণ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে স্কুলটির শতাধিক বই, খাতা, প্রশ্ন ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে সৌভাগ্যবশত পরীক্ষার কারণে এদিন দুপুরেই বাড়ি চলে গিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ফলে এ সময় নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া স্কুলে আর কেউ ছিল না। অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে যান তিনি।
অরুণ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ক্যাশিয়ার নীতু চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোক এসেছিল। তাদের দেখে নিরাপত্তারক্ষী হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভেবেই পাননি কী করতে হবে। নিজের জান নিয়ে কোনো রকমে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।
স্কুলের এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে স্কুলটিতে দমকলবাহিনী পৌঁছায়। তার আগ পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা স্কুলে ঢুকতে পারেননি দমকলকর্মীরা।
Advertisement
তিনি আরও জানান, আমরা পুলিশকে ফোন করি এবং দমকলবাহিনীকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানায়। কিন্তু সব জায়গায় ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতি থাকায় কেউই ঠিক সময় স্কুল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলটির শিক্ষকদের লকারগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাদের সব বই এবং ফাইল মেঝেতে ফেলে দেয়া হয়। ঘটনার তিন দিন পরও স্কুলের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন কর্মীরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের বাসটি বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরেক রুমে পড়ে রয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া কম্পিউটারের সিপিইউ, মনিটর। বাদ পড়েনি স্কুলের ক্যান্টিন ও শ্রেণিকক্ষগুলোও। এদিকে সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লির জাফরাবাদে সিএএ-বিরোধীরা রাস্তা অবরোধ করে। পরদিন রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সিএএর পক্ষে পাল্টা সমাবেশ শুরু হয়। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আর এই বিক্ষোভই সহিংসতায় রূপ নেয় এবং রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দিল্লি।
সহিংসতার ঘটনা তদন্তে দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। এদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, সহিংসতার ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নিহত বয়স্ক পরিবারকে ১০ লাখ ও নিহত নাবালক পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
Advertisement
দিল্লির যে এলাকাগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সেসব এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বাইরে থেকে কেউ যেন দিল্লিতে প্রবেশ করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কেজরিওয়াল। সহিংসতার ঘটনার তিনদিন পর এ বিষয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক টুইট বার্তায় তিনি সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমএসএইচ/এমএস