আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে দাঙ্গায় ১১ দিনেই সংসারের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ

মাত্র ১১ দিনের সংসার তাদের। ক্ষুণাক্ষরেও ভাবেননি সব কিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে। হাতে হাত রেখে ভালোবাসা দিবসে নতুন জীবন শুরু হয়েছিল। কিন্তু দিল্লির দাঙ্গায় সব স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল।

Advertisement

আশফাক হুসেইন এবং তার স্ত্রী তাসনিম ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-পূর্বের মুস্তফাবাদের বাসিন্দা। গত দুই সপ্তাহ ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে পরম ভালোবাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নতুন পথচলা শুরু হয় তাদের।

কিন্তু গত মঙ্গলবার সব আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়। আশফাক হুসেইন (২২) মুস্তফাবাদে কাজ করতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি ফিরতেন তিনি। দুর্ঘটনার দিন তিনি সহিংসতার মধ্যে পড়েন। তার ঘাড়ে দু'বার ছুরিকাঘাত করা হয় এবং শরীরে পাঁচবার গুলি করা হয়। এর মধ্যে তিনটি গুলিই লাগে তার বুকে।

তার পরিবারের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ তাকে জিটিবি হাসপাতালে নেয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়েই তারা তাকে আল হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। পরদিন সকালে তার মরদেহ জিটিবি হাসপাতালে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

Advertisement

তার এক স্বজন বলেন, সে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু সহিংসতার কারণে ফিরতে পারেননি। দাঙ্গার কারণে মারা যাওয়া আরও একজন হলেন মোহাম্মদ শহীদ। অটোরিকশা চালাতেন ২২ বছর বয়সী শহীদ। সোমবার বিকালে সহিংসতার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

শহীদের বাড়িও মুস্তফাবাদে। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে শহীদের ছবি দেখে তারা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। শহীদের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। দাঙ্গায় তার অনাগত সন্তান পিতৃহারা হলো। বাবাকে ছাড়াই বেড়ে উঠতে হবে এই শিশুকে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিল্লির সহিংসতায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুই শতাধিক। গত রোববার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর থেকেই বিক্ষোভ সংঘাতে রূপ নেয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা গেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অশান্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিহতদের দুই লাখ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

Advertisement

দিল্লির যে এলাকাগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সেসব এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বাইরে থেকে কেউ যেন দিল্লিতে প্রবেশ করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন কেজরিওয়াল। পাশাপাশি বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

দিল্লিতে কমপক্ষে তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে বহু বাড়ি-ঘর এবং দোকানপাটেও হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে দিল্লির সহিংসতায় দুর্বৃত্তদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

মোদির রাজনৈতিক জীবনে এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০০২ সালে মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সে সময় তিনদিন ধরে দাঙ্গা পরিস্থিতিতে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। নিহতদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। কিন্তু আদালত থেকে নিয়োগকৃত একটি প্যানেল সহিংসতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মোদিকে নিস্তার দিয়েছিল।

গত শনিবার জাফরাবাদে সিএএবিরোধীরা রাস্তা অবরোধ করে। রোববার থেকে পাল্টা সিএএর পক্ষে সমাবেশ শুরু হয়। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ শুরু হয়।

টিটিএন/জেআইএম