ছোটপর্দার এই সময়ের ব্যস্ততম নির্মাতা হাসান রেজাউল। সাহিত্যনির্ভর নাটক নির্মাণ করে ক্যারিয়ারের শুরুতেই আলাদা ভাবে সবার নজর কাড়েন তিনি। ২০১৬ সালের শেষ দিকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের লেখা ‘চুমকি’ নাটক দিয়ে নাট্য নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, জহির রায়হান, হরিশংকর জলদাস, মনি হায়দার, শুভাশিস সিনহাসহ বেশকিছু সাহিত্যিকের গল্প ও উপন্যাস থেকে নাটক নির্মাণ করেন। চলতি বছরই শুরু করতে যাচ্ছেন প্রথম সিনেমার শুটিং। হাসান রেজাউল তার নাটক ও সিনেমা ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ।
Advertisement
প্রথম পরিচয় আপনি একজন থিয়েটার কর্মী। কীভাবে থিয়েটারের প্রতি প্রথম প্রেম তৈরি হয় আপনার?হাসান রেজাউল : হ্যাঁ। থিয়েটার করতেই এই রাজধানীতে আসা। থিয়েটারই আমার প্রাণ হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। থিয়েটার করার চ্যালেঞ্জ অন্য যে কোনো চ্যালেঞ্জের চেয়ে কঠিন। এই কঠিনেরে ভালোবেসেছি বলেই, সে বঞ্চনা করেনি। থিয়েটারের শুরুটা ২০০১ সাল থেকে। ছোটবেলা থেকে স্কাউট করতাম। বয়েজ স্কাউট থেকে রোভার স্কাউট অবধি প্রায় সব ধরনের ব্যাজ অর্জন করেছি। নিয়ম আর অনৈতিকতার সাথে আপস করবো না বলেই অভিমান করে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডের লক বুক অনেকাংশ প্রস্তুত করে জমা দেইনি। এরপর মনোযোগী হলাম থিয়েটারে।
আপনার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম কী? কত সালে মঞ্চায়িত হয়েছিল? কোন কোন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন?হাসান রেজাউল : আমার থিয়েটারের শুরু নরসিংদীর নাট্যশীলন নামে একটা দল ছিল সেখান থেকে। আমার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম ‘ভেদাভেদ’। ২০০১ সালে ইউনিসেফের একটা প্রজেক্ট ছিল, যা তৎকালীন জেলা তথ্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ছেলেমেয়ে বৈষম্য নিয়ে বিভিন্ন জেলায় শো করতে হয়েছিল। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন জাহিদ রিপন। পরে ২০০৩ সালে জাহিদ ভাইসহ কয়েকজনে প্রতিষ্ঠিত নাটকের দল স্বপ্নদলে আমার যোগদানের মধ্য দিয়ে থিয়েটারে পথচলা শুরু। প্রায় ১৪ বছর এ দলের সাথে ছিলাম। ত্রিংশ শতাব্দী, জাদুর প্রদীপ (মূকনাট্য), ডাকঘর, পদ্মগোখরা, চিত্রাঙ্গদা, হরগজ, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ (মূকনাট্য) বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নাটকে অভিনয় করি। আপনার নাটকের দল নিয়ে বলুন? মঞ্চে তো নির্দেশনাও দিয়েছেন? সেই নাটকগুলো কী কী?হাসান রেজাউল : হ্যাঁ, আমি স্বপ্নদল থেকে বের হয়ে যাই ২০১৬ সালের জুলাই মাসের শুরুতে। তারপর আমরা কয়েকজন মিলে একটা দল করি ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ নামে। সেখানে দুটি নাটকের নির্দেশনা দেই। একটি পথনাটক ‘সময় ৭১’ (মূকনাট্য), আরেকটি কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ও নাট্যকার রুমা মোদকের নাট্যরূপে ‘জলপুত্র’।
মঞ্চে এখন আপনি অনিয়মিত। নতুন নাটক নিয়ে মঞ্চে ফেরার পরিকল্পনা আছে?হাসান রেজাউল : অনিয়মিত শব্দটায় আমার অনেক আপত্তি আছে। যদিও অনেক মুরুব্বি নাট্যজনরা এ শব্দ ব্যবহারে আরাম পান। গত এক দেড় বছরে আমার নির্দেশনায় বা অভিনয়ে কোন নাটক মঞ্চে আসেনি এবং কোন শো হয়নি। তাই বলে আমাকে মঞ্চে অনিয়মিত বলবেন! এটা কেমন কথা। আমি নিয়মিত শো দেখি। ছবি তুলি। তাছাড়া আমি গত বছরের শেষ দিকে বেঙ্গল থিয়েটার ছেড়ে দেই নানা কারণে। এখন ‘নাট্যধাম’ নামে আরেকটি দল প্রতিষ্ঠিত করেছি। একটা নতুন নাটকের পরিকল্পনা চলছে। আগামী রমজান মাসে চূড়ান্ত মহড়া করে ঈদের পরে শো করব আশা করি। এখন নিয়মিত টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করছেন। নাট্যনির্মাতা হওয়ার ভাবনাটা কখন থেকে? আপনার পরিচালিত টিভি নাটকগুলোর মধ্যে কিছু প্রিয় কাজের নাম বলবেন?হাসান রেজাউল : হ্যাঁ, আমি এখন নিয়মিত টেলিভিশন নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করছি। তার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও কর্পোরেট ডকুমেন্টারিও নির্মাণ করছি। ২০১২ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশনে (এনআইএমসি) সিনেমাটোগ্রাফি ও লাইটিং বিষয়ে কোর্স করার মধ্যে দিয়ে আমার নির্মাণের চিন্তার যাত্রা।
Advertisement
২০১৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে নাটক নির্মাণ ও প্রযোজনা কৌশলের ওপর দীর্ঘ কোর্স করে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করি নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েলের সঙ্গে। ২০১৬ সালের শেষ দিকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ‘চুমকি’ নাটক দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মাণকাজ শুরু করি। আমার পরিচালিত নাটকগুলোর মধ্যে কয়েকটি নাটকের নাম বলা যেতেই পারে। এগুলো হলো- চুমকি, বিপরীত তমসায়, ল্যাবরেটরি, আদর্শলিপি, মাউথঅর্গান, জলছবি, শেষ বিকেলের মেয়ে, নীল দংশন, অনুভবে অন্তরে, রিনিঝিনি ও ধূসর বেড়াল এবং রঙিন চিঠি। এর মধ্যে অধিকাংশ নাটকই প্রচার হয়েছে এনটিভিতে।
যখন সস্তা কমেডি নাটকের জোয়ার চলছে, সেই সময় সাহিত্যনির্ভর নাটক নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলেন কী করে?হাসান রেজাউল : সাহিত্য নাটকের প্রাণ। গল্পের বুননের ক্ষেত্রে সাহিত্য পরীক্ষিত এবং কঠিন। ওই যে বললাম, আমি কঠিনেরে ভালোবাসি তাই আমি সাহিত্য নিয়ে কাজ বেশি করি। এককথায় আমার কাছে ভালো লাগে। যেমন আমি রবীন্দ্রনাথ, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, জহির রায়হান, হরিশংকর জলদাস, মনি হায়দার, শুভাশিস সিনহাসহ বেশকিছু সাহিত্যিকের গল্প কিংবা উপন্যাস থেকে নাটক নির্মাণ করেছি।
সামনে আমার নির্মাণে কাফকা, তলস্তয়, বিভূতিভূষণ, মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, হাসান আজিজুল হক, কাজী নজরুল, সত্যেন সেনসহ আরও কিছু সাহিত্যনির্ভর কাজ পাবে দর্শক।
এখন টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পর পরই ইউটিউবে মুক্তি দেওয়া হয় নাটক। কার নাটকের কত ভিউ হলো এ নিয়েও প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?হাসান রেজাউল : আমি নির্মাতা। আমি নির্মাণে অভ্যস্ত হতে চাই। ভিউ দেখবে প্রযোজক কিংবা ব্যবসায়ীরা। তাদের নাটক ভিউ করার জন্য যা যা করণীয় তাই করবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সে ক্ষেত্রে নির্মাতার সহযোগিতাও প্রয়োজন। কিন্তু কতটুকু তাও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে ভাবতে হবে। যদিও এখন একজন ডিরেক্টরই সব করছে। স্ক্রিপ্ট বাছাই, শিল্পী নির্বাচন, চ্যানেলে বিক্রি, প্রযোজক ম্যানেজ করা, নির্মাণ, পোস্টের কাজ আর লসের ভাগিদার তো আছেই।
Advertisement
মুদি দোকানদারের মতো সব কেন নির্মাতাকেই করতে হবে। আমি মনে করি ভিউয়ের চাপে না ফেলে ভালো কনটেন্ট নির্মাণের সুযোগ এবং স্বাধীনতা দেয়া উচিত নির্মাতাদের। অতিথি প্রযোজকের হাত থেকে ইন্ডাস্ট্রিকে প্রফেশনাল প্রযোজকের কাছে দিতে হবে। চ্যানেলকেও ডিরেক্টর নির্ভর না হয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নির্ভর হতে হবে। তাহলে একে অপরের কাজের মান এবং চিন্তা ভালো হবে।
সাহিত্যনির্ভর নাটক কি বেশি ভিউ হয়?হাসান রেজাউল : সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভিউ শব্দটা আপেক্ষিক। আবারো বলছি, সাহিত্য নাটকের প্রাণ। ভিউ মার্কেটিং পলিসিমাত্র। অনেকটা প্রসাধনীর মতো। সময়ের সাথে সাথে স্থান কাল মানুষ পাল্টাবে। সাহিত্য তার আপন গুণ এবং গতিতেই চলবে। অনেকেই বলেন ভিউয়ের গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক বিকৃত রুচির নাটকও নির্মাণ হচ্ছে এখন, আপনারও কী তাই মনে হয়?হাসান রেজাউল : তা তো হচ্ছেই। এখানেই আমাদের দেশের পলিসিগত ভুল। মুখ দেখে মুগের ডালের অবস্থা। যে কদিন মডেলদের চিনবে সে কদিন তাদের নিয়ে হইচই। যখন ভিউ কমে যাবে তখন ফিরেও তাকাবে না। তাই হচ্ছে। যারা ভালো শিল্পী তারা কাজ পাচ্ছে না। অভিব্যক্তিহীন মানুষগুলো এখন ইভেন্টের অংশ হয়ে গেছে। তারা নিজেরাও বুঝতে পারছে না- এ সুসময় তাদের আগেও অনেকের ছিল। আবার অনেকের হবে।
অন্তত ভালো কিছু কাজ করে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা দরকার। না হলে এখনকার ভিউ পলিসি এক সময়ে হাহাকারে পরিণত করতে পারে। মনে রাখতে হবে ব্যবসায়ী শিল্পী বাস্তবের সাক্ষী, গুণী শিল্পী সত্যের সাক্ষী। কে কোনটা হবে তা যার যার ব্যক্তিগত ভাবনা।
একজন নাট্য নির্মাতা হিসেবে নাটকের বর্তমান সময় নিয়ে আপনার অভিমত কী?হাসান রেজাউল : ভালো যাচ্ছে। প্রচুর নাটক হচ্ছে। আগে সবাই ঈদে ঝাঁপিয়ে পড়ত, এখন সারা বছরই জেঁকে বসে আছে। খারাপ কি? তবে মানসম্মত কয়টা নাটক হচ্ছে তা বিস্তর আলোচনার বিষয়।
আমরা আলাপে শেষ দিকে নাটক নিয়ে আপনার প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও চাওয়া প্রসঙ্গে যদি বলতেন?হাসান রেজাউল : আমার প্রত্যাশা একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণ। প্রাপ্তির সময় আসেনি। তবে যা পেয়েছি তাও কম নয়। সাহিত্যনির্ভর নাটক নির্মাণ এখনো তো কিছু মানুষ দেখে। ভালো মন্দ জানায়। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। তবে আফসোসের জায়গা হলো কন্টাক্টররা নির্মাতা হয়ে যাচ্ছে এখন। নির্মাতা হওয়া যে শ্রম, মেধা আর অধ্যবসায়ের বিষয় ছিল তা এখন আর নেই। হয়তো আর সে সময় আসবেও না। এক সময় শুনতাম যে ভালো লাইট, ল্যান্স, অভিনয় সেন্স এবং সময়কে বুঝে সে ভালো নির্মাতা। এখন শুনি যার যত ভিউ সে তত বড় নির্মাতা। ভালো শব্দ উপেক্ষিত। হাস্যকর না!
প্রথমে নাটক নির্মাণ করতেন, পরে সিনেমায়ও পরিচালক হিসেবে ভালো করেছেন অনেকেই। সিনেমা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?হাসান রেউজাউল : নির্মাতা সব সময়ই নির্মাতা। এখানে নাটকের নির্মাতা আর সিনেমার নির্মাতা কথাটা আমি মানি না। নির্মাণ করতে মেধা এবং একনিষ্ঠতা লাগে। চাষ কেউ বর্গা জমিতে করে আবার কেউ বিঘায় বিঘায় জমিতে করে। চাষীকে কি আমরা আলাদা করি? আসলে হওয়া উচিত নির্মাণশৈলীতে। আমাদের দেশের নাটক-সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে কোন সিস্টেম নেই। প্রতিহিংসা আর আত্মঅহংকার বেশি।
আমি এই বছরই ‘ভাগীরথীকে নিয়ে সিনেমা বানাবো। মূল উপন্যাসটা লিখেছেন কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার। স্ক্রিপ্টের কাজ চলছে। আমি সিনেমার প্রি-প্রোডাকশন হিসেবে নাটক টেলিফিল্ম নির্মাণ করি। কোন নাটক থেকে ফ্রেম নেই, কোন টেলিফিল্ম থেকে প্রেক্ষাপট কস্টিউম কিংবা আলোর জ্ঞান নেই। টুকটুক করে আগাচ্ছি, দেখা যাক কি হয়। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
সিনেমা বানানোর জন্যই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা। না হলে অনেক কাজই করতে পারতাম। কিছু না পারলে রাজনীতি তো করতে পারতাম। তাইলে কাড়ি কাড়ি টাকা হতো- দেখছেন না চারদিকে…হা হা হা। সিনেমা নির্মাণ করলে কোন ধরনের সিনেমা বানাবেন?হাসান রেজাউল : আমি কোনো ধরনের মধ্যে আটকে থাকতে চাই না। আমার কাছে গল্প প্রধান। গল্পই আমাকে বলে দেবে আমি কি নির্মাণ করবো। আসলে এভাবে ভেদাভেদ তৈরি করে নির্মাতাকে ব্লক করা উচিত নয়। তবে প্রতিটা সিনেমা নির্মাণের পেছনে আমার অবশ্যই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকবে। স্বপ্ন সব সময় বড় দেখতেই ভালোবাসি। ছোট স্বপ্ন ঢাকা শহরের জ্যামের মতো, কিছুক্ষণ পর পর থেমে যেতে হয়। বড় স্বপ্ন আকাশের মতো। রঙ বদলাবে কিন্তু থামবে না।
মঞ্চে তো অভিনয় করতেন, অনেকে পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন, আপনাকে অভিনয়ে দেখা যায় না কেন?হাসান রেজাউল: আমি মঞ্চে অ্যাক্টর, স্ক্রিনে ডিরেক্টর। তবে অভিনয় করবো। সিনেমায় করবো। দুটা বিজ্ঞাপন ও ৩-৪টা নাটকেও টুকটাক অভিনয় করেছি। পরে নিজের অভিনয় দেখে নিজেরই হাসি পাইছে। এতো জগন্য অভিনেতার খাতায় নিজের নাম না লেখালে কোনো ক্ষতি নেই। আসলে অভিনয় সবচেয়ে কঠিন শিল্প। সাধনার বিষয়। যারা নির্মাণের পাশাপাশি অভিনয় করছে তারা অবশ্যই মেধাবী। আমি হয় তো এত বেশি মেধাবী না, তবে চেষ্টা করছি পরিশ্রমী হতে।
সবশেষে কী বলতে চান?হাসান রেজাউল : আমি নির্মাণেই আনন্দ পাই। প্রতিনিয়তই নতুন কিছু নির্মাণ করে যেতে চাই।
এমএবি/এলএ/পিআর