বিশেষ প্রতিবেদন

নবীনরা চায় ইলেকশন প্রবীণরা সিলেকশন

দীর্ঘ এক যুগ পর আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলনকে ঘিরে চিকিৎসকদের রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। শীর্ষ দুটি পদে (সভাপতি ও মহাসচিব) ইলেকশন নাকি সিলেকশন হবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল হলেও নেত্রী কি নিদের্শনা দিবেন তা  নিয়ে নবীন ও প্রবীণ চিকিৎসকদের মাঝে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাচিপের নবীন সদস্যরা ইলেকশনের পক্ষে। তারা ভোট প্রদানের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চান। অপরদিকে, অপেক্ষাকৃত সিনিয়ররা ইলেকশনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বর্তমানে ১৩ হাজার চিকিৎসককে স্বাচিপের সদস্য বলা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অসংখ্য হাইব্রিড (বিএনপি-জামায়াত ঘরোনার) চিকিৎসক রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীই যেন যোগ্য সভাপতি ও মহাসচিব পদ দুটি সিলেশন করে দেন, এটাই তারা চান বলে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাচিপের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী এখনও ইলেকশন বা সিলেকশন সম্পর্কে কিছুই বলেননি। একজন প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাচিপের সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে শীর্ষ পদের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী মুচকি হেসেছেন। তবে কোনো মন্তব্য করেননি।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনে স্বাচিপ সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার সাবেক বিএমএ নেতা ও সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও এককালে তার শিষ্য হিসেবে সুপরিচিত স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। নবীন চিকিৎসকদের কাছে ইকবাল আর্সলান খুবই জনপ্রিয়। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি নবীন চিকিৎসকদের পদায়ন, পদোন্নতি, উচ্চ শিক্ষার জন্য ছুটিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করায় নবীন চিকিৎসকরা ইলেকশনে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেতাকে নির্বাচন করতে চান।কিন্তু প্রবীণ চিকিৎসকরা ইলেকশনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, গত ছয় বছরে ইকবাল আর্সলান সিনিয়র চিকিৎসক ও নেতাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেননি। পেশাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সৌজন্যমূলকভাবে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলার ভদ্রতাটুকুও পালন করেননি। ইকবাল আর্সলান সুকৌশলে স্বাচিপের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন দাবি করে একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা কেউ জানেন না স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত? কেউ বলছেন, ১ হাজার ২শ’ ৫০; কেউ ২ হাজার ২শ’ আবার কেউবা বলছেন ১৩ হাজার। ২০০৩ সালের সর্বশেষ স্বাচিপের সম্মেলনে সদস্যসংখ্যা কমবেশি সাড়ে ১২শ’ ছিল। পরবর্তীতে ২০০৫-২০০৬ সালে স্বাচিপের সম্মেলন আয়োজনকে সামনে রেখে সদস্যসংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ওই সময় পর্যন্ত ২২শ’ সদস্য করা হয়। সর্বশেষ হিসেব অনুসারে স্বাচিপ সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজার। স্বাচিপের সিনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, এখনও কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে নতুন সদস্যদের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এখনও বৈধ সংখ্যা ১৩ হাজার বলা যাবে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। নবীন ও প্রবীণের চিন্তাচেতনার পার্থক্য ও সামগ্রিকভাবে স্বাচিপের সম্মেলন ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, আগেও বলেছি এখনও বলছি, নেত্রীর নির্দেশনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। নবীনরা ইলেকশনের পক্ষে প্রবীণরা বিপক্ষে এ বক্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করে তিনি বলেন, এ তথ্য সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও মিথ্যা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেন এবং নেত্রীকে ভালবাসেন এমন চিকিৎসকরা নবীন-প্রবীণ যাই ইউক না কেন তারা কখনও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। তিনি এ প্রতিবেদককে ভালভাবে চিকিৎসক রাজনীতির ইতিহাস জেনেশুনে বুঝে প্রতিবেদন লিখার পরামর্শ দেন। এমইউ/একে/আরআইপি

Advertisement