উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আরও বিস্তৃত রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। আগুন দেয়াসহ হামলা হয়েছে একাধিক মসজিদে। দলবেঁধে হামলা করা হচ্ছে বিরোধী মতাদর্শীদের ওপর। আর এসব খবর প্রচার বন্ধে টার্গেট করা হচ্ছে সাংবাদিকদেরও। মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ভারতের অন্তত পাঁচ সাংবাদিক।
Advertisement
বুধবার জম্মুর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দুর্বৃত্তদের মারধরে আহত হয়েছেন নারীসহ আরও চার সাংবাদিক।
আহতদের দাবি, সাংবাদিকদের বাঁচাতে কোথাও পুলিশ এগিয়ে আসেনি। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস কোর। তাদের মতে, ভিডিওধারণ রুখতে বিশেষভাবে টেলিভিশন চ্যানেলকে নিশানা করা হচ্ছে।
জানা যায়, বুধবার দিল্লির মৌজপুরে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক আকাশ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই চ্যানেলের পক্ষ থেকে টুইটারে আহত সাংবাদিকের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আকাশকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মৌজপুরে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করছিলাম। হঠাৎ ১০-১৫ জন গুলি ছুড়তে শুরু করলে একটা গুলি আমার গায়ে লাগে।’
Advertisement
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক অক্ষয় ডোঙ্গরে ও তার সঙ্গী ফটোসাংবাদিককে মারধর করে সহিংস জনতা। আজ হামলার শিকার হয়েছেন একই চ্যানেলের আরও চার সাংবাদিক।
সাংবাদিক সৌরভ শুক্লা জানান, তারা গতকাল রাত থেকেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির নানা এলাকায় সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করছিলেন। বুধবার সকালে মৌজপুরে যান তিনি ও তার সহকর্মী অরবিন্দ গুনসেকর। সেখানে তাদের সরাসরি ভিডিও সম্প্রচারে বাধা দেয় জনতা। পরে তারা কারাওয়াল নগর ও গোকুলপুরীতে যান।
সৌরভ বলেন, ‘গোকুলপুরীতে একটি মসজিদে হামলা করেছিল জনতা। সেখানে গেলে আমাদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হয়। পরে অরবিন্দকে মারধর শুরু করে কয়েকজন।’ ভুক্তভোগী এ সাংবাদিক জানান, এক দুষ্কৃত অরবিন্দের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এসময় লাঠির আঘাত তার কাঁধে পড়ে।
এদিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির আরেকটি এলাকায় খবর সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিক শ্রীনিবাসন জৈন, মারিয়াম আলভি ও ফটোসাংবাদিক সুশীল রাঠি। এসময় মারিয়ামের পিঠে আঘাত করে দুষ্কৃতরা, আহত হন সুশীলও।
Advertisement
এদিকে, দিল্লি পরিস্থিতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার রাতে জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ, কারওয়াল নগরে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দিল্লি-সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদেও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, রয়টার্স
কেএএ/এমকেএইচ