ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সিএএর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
Advertisement
দিল্লি পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরতে গিয়ে বেশ কয়েকবার জীবনের হুমকিতে পড়েন ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত। তার মোবাইল, নোট বই ছিনিয়ে নেয়া হয়। করা হয় মারধর।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টায়, পূর্বদিল্লির কারোয়াল নগরে আগুনে পুড়তে থাকা একটি বেকারি দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে বেকারি মালিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত। তখনই একদল উন্মত্ত জনতা তাকে ঘিরে ফেলে। বছর ৪০-এর এক ব্যক্তি হঠাই প্রশ্ন করেন ‘কে আপনি?’ উত্তরদাতা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। জবাবে সাংবাদিককে তার নোটবুক দেয়ার জন্য বলা হয়। নোটবুক হাতে পেয়েই সেখানে সন্দেহজনক কিছু রয়েছে কি না তা দেখা হয়। কিন্তু কয়েকটি ফোন নম্বর ও গুটিকয়েক পর্যবেক্ষণের কথা ছাড়া নোটবুকে কিছুই মেলেনি। তারপরই চড়া সুরে বলা হয়, ‘আপনি এখান থেকে কিছু রিপোর্ট করতে পারবেন না।’ নোটবুকটি ফেরত না দিয়ে তা সোজা আগুনে ফেলে দেয়া হয়।
এরপর একটু এগোতেই আবারও ওই সাংবাদিককে ঘিরে ধরে জনা ৫০-এর একটি দল। দেখতে চাওয়া হয় মোবাইল ফোন। আসলে তারা মনে করছিল যে মোবাইলে ছবি তোলা হয়েছে। কোনও ছবি দেখতে না পেলেও মোবাইলের বাকি সব ছবিও ডিলেট করে দেয়া হয়। এরপরই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘কেন আপনি এখানে এসেছেন? আপনি কী জেএনইউ থেকে এসেছেন?’ এরপর সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে।
Advertisement
এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রায় ২০০ মিটার দূরে রাখা বাইকের দিকে সবে এগোতে শুরু করেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ ওই সাংবাদিক। ফের একদল লাঠিধারীর সামনে পড়তে হয় তাকে। কেউ কেউ বলতে থাকে মোবাইলে ছবি তোলা হয়েছে। মুখ ঢাকা এক যুবক সাংবাদিককে তার মোবাইল দিয়ে দেয়ার জন্য বলে। সাংবাদিক তখন বলেন, ‘মোবাইল থেকে সব ডিলিট করা হয়েছে।’ যা বলতেই উচ্চবাক্যে ফের বলা হয়, ‘ফোন দে’। এরপরই যুবকটি সাংবাদিকের পেছনের দিকে গিয়ে দু’বার তার পায়ে রডের বাড়ি মারে। সাংবাদিকের কথায়, ‘তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বলা হয় আমার কাছে কোনটা বেশি জরুরি, জীবন নাকি মোবাইল। আমি মোবাইলটা বের করে ওদের হাতে দিতেই চিৎকার করতে করতে ওরা চলে যায়।’
এখানেই শেষ নয়। এরপরও আরও একদলের মুখোমুখি হতে হয় সাংবাদিককে। সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত বলছিলেন, ‘বছর ৫০-র এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে আমার চশমা খুলে নিল। এরপরই দু’বার থাপ্পর মারল। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় রিপোর্টিং করার জন্য এই পরিণতি। এরপরও ওরা আমার প্রেস কার্ড দেখল, যা দেখে বলল, হুম- তুমি হিন্দু? বেঁচে গেলে। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি। আমি প্রকৃত হিন্দু কি না এর আরও প্রমাণ দাবি করা হয়। বলতে বলা হয়- জয় শ্রীরাম। তবে আমি নীরবই ছিলাম।’
এরপরই প্রাণ বাঁচাতে সাংবাদিককে দ্রুত চলে যেতে বলা হয়।
জেডএ/এমকেএইচ
Advertisement