লতিফুল হক মিয়া
Advertisement
আমরা যেহেতু নাতিশীতোষ্ণ ও সমতল অঞ্চলে বসবাস করি; সেই অর্থে বরফ ও পর্বত দেখার ইচ্ছা অনেক দিনের। পরিকল্পনা স্থির করলাম। একসাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং এবং পরিচ্ছন্ন, অর্গানিক, পর্বত ও তুষারময় রাজ্য সিকিম ভ্রমণ করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বেশ কয়েক মাস যাবৎ পরিকল্পনা আঁটছিলাম। আমার সহকর্মী আবিদ ভাই কয়েক মাস আগে দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ করে এসেছেন। তার কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিলাম। সেই সাথে বেশকিছু ভ্রমণবিষয়ক পোর্টাল এবং ইউটিউব থেকেও ভালো ধারণা নিয়ে টিম তৈরি করতে শুরু করলাম।
এ সময়ের মধ্যেই ৯ জনের একটি টিম তৈরি হলো। ভারতে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রস্তুতি নিলাম ভ্রমণের। ৮ জন রাজধানী ঢাকা থেকে ‘ভ্রমণ কর’ দিলাম। আর অন্যজন বগুড়া থেকে ‘ভ্রমণ কর’ পরিশোধ করলেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে এসআর ট্রাভেলসের বাসে ৬ জনের একটি দল নিয়ে বুড়িমারীর উদ্দেশে রওনা দিলাম।
যাত্রী ছিলাম আমি ও আমার জীবনসঙ্গিনী; ভাতৃতুল্য সহকর্মী আহমেদ জুবায়ের; ছোট ভাই বিশ্বজিৎ; পূর্বের সহকর্মী জুয়েল মোল্লা এবং আইনজীবী কাজল ভাই। অপরজন আমার মামি বুড়িমারী থেকে আমাদের টিমে যোগ দিলেন। আর টিমের বাকি দু’জন ছোট বোনসহ রানা ভাই পোর্ট জটিলতার কারণে আমাদের দু’দিন আগেই ঢাকা থেকে রওনা দেন। কথা ছিল- তারা বেনাপোল দিয়ে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছে রাত্রি যাপন করবেন। পরের দিন ১২ ডিসেম্বর তারা টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন।
Advertisement
রাত সোয়া ৯টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বুড়িমারীতে পৌঁছলাম ১২ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ৯টায়। পথিমধ্যে ৩ ঘণ্টার যানজট ও তীব্র কুয়াশা থাকায় পৌঁছতে বিলম্ব হলো। বুড়িমারীতে পৌঁছার পর গ্রুপের দু’জন গেলেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করতে। আনুষাঙ্গিক অন্য কাজগুলো পরিপূর্ণ করে নাস্তা করতে গেলাম ঐতিহ্যবাহী বুড়ির হোটেলে।
৬৭৩ টাকায় ৭ জন সকালে নাস্তা সেরে লাইন ধরলাম ইমিগ্রেশনে। সেখানে প্রত্যেকের ছবি ও পাসপোর্টে সিল মারা শেষে গেলাম বিজিবির চেকপোস্টে। বাংলাদেশ ও ভারতের ইমিগ্রেশনের সব কাজ শেষ করতেই দুপুর ২টা গড়ালো। এরপর মানি এক্সচেঞ্জ শেষ করে গেলাম শিলিগুড়ির উদ্দেশে গাড়ি ঠিক করতে। চালকরা ৮ সিটের টাটা সুমো জিপের ভাড়া চাইল ৪ হাজার রুপি। ভাড়া শুনেই তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। মুলামুলি করেও ২ হাজার ৫০০ রুপির নিচে কেউ যেতে রাজি হলো না।
অবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ভিন্ন পন্থায় শিলিগুড়ি যাব। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। ২২০ রুপিতে চেংড়াবান্দা থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্ব মেকলিতে গেলাম ২টি ব্যাটারিচালিত অটোতে করে। মেকলিতে গিয়ে একটি মারুতি-সুজুকি গাড়ি চালকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হলো। তিনি আমাদের শিলিগুড়ির এসএনটি (সিকিম ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট) টার্মিনালে পৌঁছে দেবেন ১ হাজার ৫০০ রুপিতে। এ পন্থা অবলম্বন করায় আমাদের সাশ্রয় হলো প্রায় ১ হাজার রুপি।
এরপর শুরু হলো আমাদের অজানাকে জানার যাত্রা। যা কিছু দেখছি সবকিছুই নতুন। ভিন্ন পরিবেশ। ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমরা অনেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে মিল খুঁজছি। কেউ মিল খুঁজে পাচ্ছি আবার কোথাও ভিন্ন দৃশ্যপটও আবিষ্কার করছি। চেংড়াবান্দা থেকে শিলিগুড়ির যাওয়ার ৮২ কিলোমিটার পথে টিমের প্রত্যেকেই স্থানীয় জীবন-যাত্রা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার সবকিছুই অবলোকন করছি। কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা অতিক্রম করলাম তিস্তা নদী। নদীটি সিকিম হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এটির সঙ্গে পুনরায় আমাদের সাক্ষাৎ হবে সিকিম যাওয়ার পথে।
Advertisement
তিস্তা নদী অতিক্রম করে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখতে পেলাম সমতল ভূমির চা বাগান। চা বাগানটি সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায়। সবুজ চা বাগানের মাঝ দিয়ে পিচঢালা কালো রাস্তা। এককথায় অপরূপ সুন্দর। চা বাগানে ছবি তোলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হলো সবার। চালককে অনুরোধ করে গাড়ি থামালাম। সবাই চা বাগানে হুমড়ি খেয়ে নেমে পড়লাম ছবি তুলতে। ছবি তোলা শেষে আবার যাত্রা শুরু হলো শিলিগুড়ির উদ্দেশে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পৌঁছলাম শিলিগুড়ির এসএনটি টার্মিনালে।
রানা ভাই, যিনি আমাদের আগে শিলিগুড়ি পৌঁছেছিলেন; তার সঙ্গে আমরা সাক্ষাতের পর্ব সেরে নিলাম। এরপর আমরা নিজেদের উদ্যোগে সিকিম ও দার্জিলিং ঘোরার পরিকল্পনা করি। শিলিগুড়ির এসএনটি টার্মিনাল থেকেই সিকিম যাওয়ার অনুমতি নেওয়া যায়। ওই অনুমতিপত্র নিয়ে সিকিম প্রবেশ গেটে গিয়ে পাসপোর্টে সিল মেরে সিকিমে যাওয়া যায়। তবে অফিসটি চালু থাকে স্থানীয় সময় ৪টা পর্যন্ত। আমাদের যেতে দেরী হওয়ায় এ পদ্ধতি নিতে আমরা ব্যর্থ হই।
চলবে...
এসইউ/এমকেএইচ