আইন-আদালত

হোসেন ও মোসলেমের বিরুদ্ধে চার্জ দাখিল ১৯ নভেম্বর

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পালাতক সৈয়দ মো. হুসাইন ওরফে হোসেন এবং গ্রেফতার মো. মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য আগামী ১৯ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।বৃহস্পতিবার প্রসিকিউটরের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য ৬ সপ্তাহের সময় আবেদন করা হয়। সময় আবেদনের শুনানি শেষে আাগমী ১৯ নভেম্বর এই দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।তিনি বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পালাতক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মো. হুসাইন ওরফে হোসেন (৬৪) এবং গ্রেফতার কিশোরগঞ্জের মো. মোসলেম প্রধান (৬৬) তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে প্রস্তুত করে বুধবার সকালে ধানমন্ডিস্থ তদন্ত সংস্থার কার্যালয়। ওই প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সকালে প্রসিকিউশনে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।আসামি দুই জনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নি-সংযোগ, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তুরিন বলেন, মো. হুসাইন ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছোট ভাই। হাসান আলীকে গত ৯ জুন ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল-১।হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাস ২৫ দিন তদন্ত শেষ করা হয়। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে মূল একশত ৬১ পৃষ্ঠার সঙ্গে সর্বমোট চারশত ৩৯ পৃষ্ঠার নথিপত্র রয়েছে। প্রতিবেদনে ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচি এবং ঘটনাস্থলের স্থির চিত্র দাখিল করা হবে প্রসিকিউশনে।তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে মোট ঘটনা ছয়টি। এর মধ্যে হত্যা ৬২টি, অপহরণ ও আটক ১১ জনকে এবং  দুইশত ৫০টি বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। মামলায় মোট ৪৭ জন সাক্ষী রয়েছেন।দুইজনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার আনা অভিযোগগুলো নিন্মরুপ:প্রথম অভিযোগ: নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশ্মশান এলাকায় ৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হুসাইনের বিরুদ্ধে ছয় মহিলাকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চারজনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।দ্বিতীয় অভিযোগ: নিকলী বাজার ও নিকলী থানা কম্পাউন্ড এলাকায় হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে ৭১ সালের ২ সেপ্টিম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন।তৃতীয় অভিযোগ: নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়া ৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং দুইশত ৫০ বাড়ি-ঘরে আগুন ধরানোর অভিযোগ রয়েছে।চতুর্থ অভিযোগ: নিকলীর নানশ্রী গ্রামে ৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ হুসাইনের বিরুদ্ধে।পঞ্চম অভিযোগ: হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে ৭১ সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেকের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ।ষষ্ঠ অভিযোগ: ৭১ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত নির্যাতন করে হত্যা। পরবর্তীতে তাদের মরদেহ কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়াহর বিভিন্ন সড়কে রিকসায় ঘোরানো এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বিভৎসতা প্রর্দশন করার অভিযোগ রয়েছে রাজাকার হুসাইনের বিরুদ্ধে।এফএইচ/একে/আরআইপি

Advertisement