প্রথমবারের মতো ভারত সফরে এসে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের স্বাক্ষী হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সফরের মাঝেই উত্তরদিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে সিএএর সমর্থক ও বিরোধীদের মাঝে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, গত বছর দেশটির পার্লামেন্টে নতুন এই আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানী নয়াদিল্লিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংঘাত-সংঘর্ষে দিল্লিতে এক পুলিশ সদস্য ও ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের মাঝে যানবাহন পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার দিল্লির উত্তরাঞ্চলে আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
বিবিসির নয়াদিল্লি প্রতিনিধি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিল্লিতে আতিথেয়তা দেয়ার মাঝে সংঘর্ষের এই ঘটনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ট্রাম্পের ভারত সফরকে আড়ালে ফেলেছে এই সহিংসতা।
রোববার উত্তর দিল্লির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্তত তিনটি স্থানে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে; যা সোমবারও অব্যাহত থাকে। সোমবার নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। টেলিভিশনে প্রচারিত কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সংঘর্ষস্থলের আশপাশের ভবনে আগুন জ্বলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তারার মঙ্গলবার সকালেও জাফরাবাদ এবং চাঁদবাগ এলাকার রাস্তায় ইট-পাথর ও পোড়া যানবাহন পড়ে থাকতে দেখেছেন। অনেকেই বলছেন, এসব এলাকাকে রণক্ষেত্রের মতো মনে হচ্ছে। সহিংসতায় বিধ্বস্ত এসব এলাকায় পুলিশ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইডি কার্ড দেখে শরীর তল্লাশি করে শহরে লোকজনকে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে পুলিশ। দিল্লির কিছু মেট্রো স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Advertisement
দিল্লির নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফেডারেল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে দিল্লি পুলিশ নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবহিত করেছে।
মঙ্গলবার আরও পরের দিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তবে এই সংঘর্ষ এবং সংঘাতের পেছনে দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে গেলে সিএএ-বিরোধীদের বলপ্রয়োগপূর্বক তাড়িয়ে দেয়া হবে বলে দু'দিন আগে হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপির এই নেতা।
দুদিনের এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ছয়জন বেসামরিক ও এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে গুরুতর আহত আরও কপেক্ষ ৩৫ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গুরুতর আহতদের মধ্যে পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দিল্লির অন্য একটি বিশেষায়িত হাাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিক্ষোভের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ আলভি নামের এক অটোরিকশা চালকের প্রাণহানি ঘটেছে। তার ভাই রশিদ বিবিসিকে বলেছেন, মাত্র একমাস আগে বিয়ে করেছিলেন শহীদ। এদিকে, দু'দিনের সফরে সপরিবারে এখন ভারতে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার সকালে আহমেদাবাদে অবতরণের পর মোতেরা স্টেডিয়ামে বিশাল সমাবেশে যোগ দেন করেন ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর সস্ত্রীক আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করে ট্রাম্প। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দিল্লি পৌঁছান তিনি।
Advertisement
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
বিক্ষোভের তীব্র দাবানল যায় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ আরও বেশকিছু রাজ্যে। বিতর্কিত এ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় দুই ডজনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এসআইএস/এমএস