ধর্ম

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মসজিদ-গির্জায় সতর্কতা জারি

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মরণব্যাধি করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। বর্তমানে এশিয়ার বেশ কিছু দেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপসহ ৩৭টি দেশ ও অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে মুসলিমদের নামাজের মুসাল্লা ব্যবহার ও পারস্পরিক সাক্ষাতে হ্যান্ডশেকে সতকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের মুসলিমবিষয়ক মন্ত্রী মাসাগোস জুলকিফলি।

Advertisement

মুসলিমরা মসজিদে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং পারস্পরিক সাক্ষাতে হ্যান্ডশেক তথা মুসাফাহা করে থাকে। এ সময় তাদেরকে সতর্কতামূলক নিজস্ব ম্যাট তথা মুসাল্লা ব্যবহার ও পরস্পরের সঙ্গে হ্যান্ডশেক (মুসাফাহা) করতে নিষেধ করা হয়েছে।

উহানে দেখা দেয়া এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় তা রোধ করতেই জামাআতে নামাজ আদায়ের সময় মসজিদে ব্যবহৃত কার্পেট বা গালিচা ব্যবহার না করে নিজেদের ব্যক্তিগত ম্যাট বা মুসাল্লা ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের মুসলিমবিষয়ক মন্ত্রী মাসাগোস জুলকিফলি।

বর্তমানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার ১৫০জন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭০১-এ। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

Advertisement

করনোভাইরাস প্রতিরোধেই প্রত্যেককে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই মসজিদে নিজস্ব ম্যাট ব্যবহার ও মুসাফাহা না করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কারো সঙ্গে মুসাফাহা করার প্রয়োজন নেই। তারপরও যদি কেউ হ্যান্ডশেক করে ফেলে তবে সে যেন দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধুয়ে ফেলে। হাত ধোয়ার আগে তার উচিত কোনোভাবেই যেন হ্যান্ডশেক করা হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করে। স্ট্রেইট টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সিঙ্গাপুরের মসজিদগুলো এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের ‘গ্রেস অ্যাসেম্বলি অফ গড গির্জার দুই কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য গির্জার পরিষেবা ও কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় মসজিদ বন্ধ ঘোষণাএদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মালয়েশিয়ার পুত্রা মসজিদ ও ফেডারেল টেরিটরি মসজিদে সাময়িক সময়ের জন্য পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে মসজিদগুলো স্থানীয়দের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

Advertisement

বাস্তবেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মসজিদ, গির্জা ও মন্দিরসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ব্যাপারে যেমন সতর্কতা অবলম্বন জরুরি তেমনি পারস্পরিব দেখা-সাক্ষাতে আপাতত হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও আবশ্যক।

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা। যেভাবে মহামারী আক্রান্ত অঞ্চল বা ব্যাক্তিদের যে দোয়া পড়তে বলেছেন বিশ্বনবি। আর তাহলো-اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’

হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ তিরমিজিতে আরও একটি দোয়া উল্লেখ করাহয়েছে। যা পড়তে বলেছেন বিশ্বনবি-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিজেদের যেমন সতর্ক হওয়া জরুরি। তেমনি প্রতিদিনের জীবন-যাপনেও যেকোনো জিনিস ব্যবহার, হ্যান্ডশেক, কোলাকুলির ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা আরও বেশি জরুরি।

এমএমএস/এমএস