রাজনীতি

বঙ্গবন্ধু উপাধির ৫১ বছর

২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ৫১ বছর আগে ১৯৬৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিল। যিনি পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

Advertisement

তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ এক জনসভায় জাতির জনক শেখ মুজিবকে জনগণের পক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করেছিলেন। এর একদিন আগে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দি থেকে মুক্তি পান।

১৯৬৮-৬৯ মেয়াদে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের ভিত্তিতে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলাম। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জাতির পক্ষ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।”

সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, “আমি ডাকসু ভিপি হিসেবে এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করি এবং বঙ্গবন্ধুর সামনে আমি ভাষণ দিই। আমি বলেছিলাম যে, আমরা আমাদের মহান নেতা, যিনি তার যৌবন পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন এবং যিনি হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছেন, তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিচ্ছি।”সেই থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সেই খেতাব দ্বারা পরিচিত, বাংলায় যার অর্থ ‘বাংলার জনগণের বন্ধ ‘।

Advertisement

চলতি বছর জাতি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া সেই মহান নেতৃত্বের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে চলেছে।

প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন (কলা অনুষদ ভবন) থেকে যে আন্দোলন (গণঅভ্যুত্থান) আমরা করি, তাতে আসাদ, মতিউর, মকবুল, ক্যান্টনমেন্টে রুস্তম ও সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শামসুজ্জোহা শহীদ হন। তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হই।’তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হই এবং পরবর্তীকালে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেন।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তার যৌবনের বেশিরভাগ সময়, ১৩ বছর, মানুষের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন। অন্য কোনো নেতা মানুষের জন্য এতটা ত্যাগ স্বীকার করেননি।

‘আমি এটা বলতে গর্ববোধ করি যে, আমরা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার এবং আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দুটি স্লোগানই বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু, পরবর্তীকালে জাতির পিতাকে মুক্ত করেছিলাম এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করেছি’-যোগ করেন তোফায়েল আহমেদ।

Advertisement

১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মূল আসামি হিসেবে ১৯৬৮ সালে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। যা পরবর্তীকালে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা করে, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের মহড়া।

তোফায়েল বলেন, ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ডাকসু ভিপি তোফায়েল এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নাজিম কামরান চৌধুরী, ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ, জিএস খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, জিএস শামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) মোস্তাফা জামান হায়দার, জিএস মাহবুবউল্লাহ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল ও জিএস নুরুল ইসলাম মুন্সীসহ ১০ জন ছাত্রনেতার সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন চলাকালে পুলিশ ১৪৪ ধারা আরোপ করা সত্ত্বেও ১৭ জানুয়ারি পরিষদ এই আন্দোলন শুরু করে।

তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে ২০ জানুয়ারি আসাদ নিহত হন, ২৪ জানুয়ারি মতিউর, মকবুল, রুস্তম এবং আলমগীর শাহাদাতবরণ করেন।

তোফায়েল বলেন, ১৯৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি তারা পল্টনে একটি জনসভা করার শপথ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা শপথ নিয়েছিলাম আমরা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করব এবং আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মুক্ত করব।

‘১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিচারাধীন কারাবন্দি সার্জেন্ট জহরুল হক ঢাকা সেনানিবাসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হয়। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পরিষদ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারকে শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় এবং অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়।’

তোফায়েল বলেন, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) এক বিশাল জনসভায় প্রায় দশ লাখ মানুষ একযোগে হাত তুলে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া প্রস্তাবে সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।

এফএইচএস/এসআর/পিআর