শহরের রাস্তাঘাট সব নিশ্চুপ, মানুষজন নেই বললেই চলে। এছাড়া দোকানপাটও সব বন্ধ। কিছু মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তাও নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দুজনের মৃত্যু ছাড়াও অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে উত্তর ইতালির লোদি প্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গোতে।
Advertisement
শহরটির স্টেশনের পাশ দিয়ে একাকি হেঁটে যাচ্ছিলেন পাওলা নামের এক নারী। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে তাকে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদক এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভূতূড়ে শহর, করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দী, কোনো মানুষ রাস্তায় নেই।’
শহরটির বেশিরভাগ মানুষ শহরের ওই এলাকায় বসবাস করেন। কিন্তু সেখানকার স্টেশন বন্ধ। কেউ টিকিট বিক্রি করছে না। আর কোনো যাত্রীও ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে নেই। গত শুক্রবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তাদের নিজেদের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। শনিবার মারা যান আরও একজন।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে ইতালিতে শুধু দুজনের মৃত্যু নয় এশিয়ার বাইরের কোনো দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ ৭৯ জন মানুষ দেশটিতে এখন করোনায় আক্রান্ত। ইতালির লোম্বার্ডি অঞ্চলের শহর কডোঙ্গোকে দেশটিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দাবি করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
Advertisement
সরকারি কর্তৃপক্ষ কয়েক ডজন শহরে মানুষের চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে রেখেছে। এসব শহরে প্রবেশ কিংবা সেখান থেকে বাইরে যেতে হলে অনুমতি নিতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এদিকে ডিসেম্বরের শেষে চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন আড়াই হাজার ছুঁই ছুঁই।
তবে কডোঙ্গো নামে ইতালির ওই ভূতুড়ে শহরের ফার্মেসিগুলো খোলা রয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকায়। রোসা কাভালিল নামের এক ফার্মেসি মালিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আছি। কিন্তু আমাদের এখন ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’
তিনি বলছেন, মাস্ক বিক্রি বাড়লেও ক্রেতারা ব্যাকটেরিয়া রোধক, অ্যালকোহল এবং ব্লিচিং পাওডার কিনে মজুত করে রাখছেন। ‘বেশিরভাগ মাস্ক আমদানি করা হয় চীন থেকে কিন্তু এখন সেগুলো তাদেরই বেশি প্রয়োজন। কেননা তারা এখন বিপদের মধ্যে রয়েছে। তাই মাস্কের চাহিদা বাড়লেও যোগানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এখানে।’
শহরের ভেন্ডিং মেশিন (স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা) থেকে হালকা খাবার এবং পানীয় কেনার জন্য ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন শহরটির এক নারী। এরিকা নামের ওই নারী বলছেন, ‘আমরা শান্ত থাকার চেষ্টা করছি। কারণ এটা এমন এক সময় যখন আতঙ্ক খুব সহজেই ছড়াতে পারে।’
Advertisement
তিনি জানালেন, খাবার কিনতেই বাইরে বের হয়েছেন কারণ তিনি এটা নিশ্চিত নন যে, সুপারমার্কেটগুলো আদৌ খোলা থাকবে কিনা। তিনি বললেন, ‘আমিও কিছুটা ভীত, কারণ আমরা সবাই ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হতে পারি। আমি একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করি এবং আর আমাকে প্রতিদিন অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়।’
ইতালির ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি মিলান শহরের পাশের এক শহরে ৫০ হাজার মানুষের বাস। কর্তৃপক্ষ শহরটির বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া দোকানপাট আর স্কুল কলেজও এখন বন্ধ। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেছেন, ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে ‘অভাবনীয় পদক্ষেপ’ নিচ্ছে সরকার।
এসএ/এমকেএইচ