জাতীয়

চোরের ঘরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিস্তল!

চুরির অভিযোগে চোর ধরতে গিয়ে চোরের শয়ন কক্ষে পুলিশ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার করা ৭ দশমিক ৬ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল। গ্রেফতার করা হয়েছে মোহাম্মদ সোহান নামে ওই চোরকে।

Advertisement

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদি এলাকার আমিনুল ইসলামের দরজার তালা ভেঙে বাসায় চুরি করেন। তার বাসা থেকে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, এক জোড়া স্বর্ণের বালা, দুইটি স্বর্ণের ব্রেসলেট, তিনটি স্বর্ণের গলার চেইন, দুইটি গলার হার, তিন জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ৮টি স্বর্ণের হাতের আঙটি, যার ওজন ১০ ভরি চুরি হয়।

এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা হয়। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চোর সোহানের যোগসাজশ খুঁজে পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহান জানান, তিনি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিয়মিত ক্রাইম পেট্রোল দেখে চুরিতে লিপ্ত হন। সেখান থেকেই মূলত চুরির আধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করেন। তিনি দিনের বেলাতে চুরি করাকে বেছে নিতেন। প্রথমে দারোয়ানের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন। এরপর বাসায় প্রবেশ করতেন। বাসায় দরজায় তালা মারা থাকলে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে তালা খুলতেন। সিসিটিভি ক্যামেরা নেই এমন বাসা চুরির জন্য টার্গেট করতেন সোহান।

সোহানের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, ৩০০ গ্রাম গাঁজা, নগদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, তিনটি চাকু, একটি খুর, ২টি স্ক্রু ড্রাইভার, লোহার তৈরি ৬টি র‌্যাথ, ২টি রেঞ্জ, ৫টি ঘড়ি, চাবি ২২টি, তিনটি মানিব্যাগ, টর্চলাইট, স্বর্ণালঙ্কার, ইমিটেশন ও বেশ কয়েকটি হাতলযুক্ত ব্যাগ রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে গুলশানের ডিসি সুদীপ কুমার বলেন, তার কাছ থেকে যে বিদেশি পিস্তল পাওয়া গেছে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া অন্য কারও এই অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সোহান এই অস্ত্র কোথায় পেয়েছেন তা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

অপর প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, প্রাথমিকভাবে সোহান জানিয়েছেন, এক লোকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিদেশি পিস্তলটি কিনেছেন। কেনার পর তিনি এখনও ওই পিস্তলটি ব্যবহার বা প্রদর্শন করেনি বলে জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাকে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Advertisement

‘জব্দ করা অস্ত্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থার সদস্য ব্যবহার করতেন, সে বিষয়েও তালাশ চলছে। অস্ত্রটি কারও খোয়া গিয়ে থাকলে কেউ যোগাযোগ করে কিনা তা জানা যাবে। আবার পিস্তলটি কেউ ভাড়া দিয়েছে কি না অথবা অন্য কেউ সরবরাহ করেছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে’-যোগ করেন সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

গুলশানের ডিসি বলেন, বাসা বাড়িতে এখন সহজেই সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মোবাইলফোনে তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। তাই সকলে যাতে নিজের বাসাকে সেভ রাখেন। পুলিশের দায়িত্বও রয়েছে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। পুলিশ সবসময় অ্যালার্ট রয়েছে।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতার সোহানের নামে পল্লবী থানায় বেশ কয়েকটি চুরির মামলা রয়েছে।

গত বছর শাহবাগ থানা থেকে একজন এএসআইয়ের বিদেশি পিস্তল খোয়া যায়। চোরের শয়ন কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটিই সেই পিস্তল কি না জানতে চাইলে সুদীপ কুমার বলেন, এটি ডিএমপির কোনো অস্ত্র নয়। অস্ত্রাগারে সিরিয়াল মেলানো হয়েছে। এটি ঢাকার বাইরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও অস্ত্র হবে।

জেইউ/এসআর/জেআইএম