আন্তর্জাতিক

করোনার ভয়ে কাঁপছে ইসরায়েল, নামতে দিল না দ. কোরিয়ার বিমান

চীনের হুবেই প্রদেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন পুরো বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলেও এই ভাইরাসের বিস্তারের লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার বিস্তার মোকাবিলার পথ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। এমন আতঙ্ক ছড়ানো এই ভাইরাসের ভয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার যাত্রীবাহী একটি বিমানকে তেলআবিবে নামার অনুমতি দেয়নি ইসরায়েল।

Advertisement

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। রোববার পর্যন্ত দেশটিতে ৫৫৬ জনকে করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজনে।

নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। হুবেই প্রদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের ২৯টি দেশ ও চারটি অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায়।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যে ৫৫৬ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন; তাদের অধিকাংশই দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় দায়েগু শহরের একটি গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আক্রান্তদের বেশিরভাগই গত সপ্তাহে দায়েগুর শিনচিওনজি গির্জায় এক প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন। গির্জায় অংশ নেয়া ৬১ বছর বয়সী এক নারীর শরীর পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের আলামত পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরে যাওয়ার কোনও রেকর্ড নেই ওই নারীর।

Advertisement

কোরিয়া সেন্টারস ফর ডিজিজ অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (কেসিডিসি) বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫৫৬ জনের মধ্যে ৩০৯ জনই ওই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট; যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

কেসিডিসির পরিচালক জিওং এন-কিয়ং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা দায়েগুতে ভাইরাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ ব্যাপারে আরও বিশদ অনুসন্ধান চলছে।

এর আগে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে যাদের শনাক্ত করা হয়; তাদের চীন সফরের রেকর্ড ছিল। কিন্তু ২৫ লাখ মানুষের দায়েগু শহরে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে চীনের সংশ্লিষ্টতা নেই। দ্রুতগতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শুক্রবার দায়েগু এবং চিওংডো শহরকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২০ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো করোনাক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। তখন থেকে রোববার পর্য ন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দেশটিতে চারজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। রোববার চিওংডো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৭ বছর বয়সী চতুর্থ এক ব্যক্তি করোনায় মারা গেছেন।

Advertisement

এদিকে, করোনার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় শনিবার দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণে সতর্কতার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অসুস্থ লোকজনের সংস্পর্শ এড়াতে এবং ভাইরাস সংক্রমিত দ. কোরিয়া সফর না করতে দেশটির নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।

কেসিডিসি বলছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নর্থ গিওংস্যাং প্রদেশের ১৭ জন যাজক ও তাদের ট্যুর গাইড ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তাদের সবাই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এদিকে, ভাইরাসের আতঙ্কে ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোরিয়া এয়ারের দক্ষিণ কোরীয় যাত্রীবাহী একটি বিমানকে অবতরণ করতে দেয়া হয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনও ধরনের আগাম নোটিশ দেয়া ছাড়াই বিমান অবতরণ করতে না দেয়ায় আমাদের ভ্রমণকারীদের অসুবিধার কথা জানিয়ে ইসরায়েলের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে এ ধরনের কোনও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে সিউলকে আশ্বস্ত করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু, ওয়াংজু এবং অন্যান্য শহরের সব গির্জায় গণজমায়েত ও অন্য ধরনের সব সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

চীনে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের দুই ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়েছে। শনিবার পর্যন্ত চীনে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৯৩৬ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৪৪২ জন। তবে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৭২৬ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪৬২ জন।

সূত্র : রয়টার্স, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

এসআইএস/জেআইএম