ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে আধুনিক ও বিলাসবহুল চার তলা লঞ্চ। লঞ্চটি নির্মাণ করেছে দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি। লঞ্চটির নাম রাখা হয়েছে সুন্দরবন-১৪। এই কোম্পানির ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে আরও ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে। তবে সুন্দরবন-১৪ লঞ্চটি আধুনিক সাজসজ্জা, নির্মাণশৈলী ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে অন্য লঞ্চগুলোকে হার মানাবে বলে দাবি করেছে মালিকপক্ষ।
Advertisement
সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি এ লঞ্চটিতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে নানা ব্যবস্থা। ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর এ লঞ্চটিতে। এছাড়া যাত্রীদের নামাজের জন্য আলাদা স্থান ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটিতে সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন কমান্ডার ও ছয়জন সশস্ত্র আনসার সদস্য লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নদী পথে চলাচলের জন্য শনিবার বিকেলে মিলাদ ও দোয়া-মোনাজাতের দিয়ে বিলাসবহুল লঞ্চ সুন্দরবন-১৪ এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল নদীবন্দরে লঞ্চটি উদ্বোধনের পর থেকে শত শত লোক লঞ্চটি দেখতে ভিড় করেন। প্রথম দিনে লঞ্চটির স্মৃতি ধরে রাখতে উৎসুক জনতা সেলফি তোলেন। আবার অনেকে ঘুরে ঘুরে লঞ্চটির সৌন্দর্য দেখেন।
Advertisement
সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু জানান, বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডক ইয়ার্ডে লঞ্চটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ চলেছে দুই বছর। প্রতিদিন ১৫০ জন শ্রমিক নিরলস পরিশ্রম করে সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। ২৪১ ফুট দৈর্ঘ্যর এ নৌযানটির প্রস্থ ৩৬ ফুট। এর ২, ৩ ও ৪ তলায় ১৪১টি প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন) রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভিআইপি, তিনটি সেমি ভিআইপি, পাঁচটি ফ্যামিলি, ৫৮টি সিঙ্গেল ও ৩৪টি ডবল কেবিন রয়েছে।
লঞ্চটির অনুমোদিত যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৭৬০ জন। এছাড়াও এটির চার শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। লঞ্চটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ডেকোরেশন। বর্ণিল বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা দিয়ে আলোকিত করা হয়েছে লঞ্চটিকে। লঞ্চের প্রতিটি কেবিন দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। যা রুচিশীল যাত্রীদের জন্য লঞ্চযাত্রায় বাড়তি আনন্দ দেবে।
তিনি আরও জানান, জাপানের একটি কোম্পানির তৈরি এক হাজার ২০০ অশ্ব শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি জেনারেটর রয়েছে। স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে একটি।
ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, লঞ্চটি উদ্বোধন হলেও আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা থেকে বগা হয়ে পটুয়াখালী চলাচল শুরু করবে সুন্দরবন-১৪ লঞ্চটি। লঞ্চটি পটুয়াখালীবাসীর জন্য একটি চমক। এর আগে ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথে এ ধরনের বিলাসবহুল চার তলা লঞ্চ চলাচল করেনি।
Advertisement
সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের স্বত্বাধিকারী ও লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে এ লঞ্চটি নির্মাণ করা হয়েছে। লঞ্চটি হুইল হাউজে (চালকের কক্ষ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতির। পাশাপাশি নৌযানটিতে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের ১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌযানটি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে । সুন্দরবন-১৪ লঞ্চ পরিচালনার জন্য দক্ষ মাস্টার অফিসার ও ইঞ্জিন অফিসার ছাড়াও মোট ৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু থাকছে।
তিনি আরও জানান, লঞ্চের করিডরগুলোতে নান্দনিক ডিজাইন করা হয়েছে। জানালার কাচ, কাঠের ব্যবহার, রঙ প্রভৃতির মাধ্যমে নান্দনিক ডিজাইন করা হয়েছে। দুই ও তিন তলায় কাঠের কারুকাজ ও নজরকাড়া আধুনিক ঝাড়বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের নানা রঙের এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এই লঞ্চটির ডেকের যাত্রীদের জন্য নিচ তলা, দুই ও তিন তলায় বিছানো রয়েছে মসৃণ কার্পেট। ডেকের যাত্রীদের বিনোদনের জন দুটি বিশাল এলইডি টিভি লাগানো হয়েছে। কেবিনগুলোকে বিলাসবহুল ও অভিজাত করতে দামি আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তবে অত্যাধুনিক এ নৌযানটির সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকছে বলে জানান সাইদুর রহমান রিন্টু।
সাইফ আমীন/আরএআর/পিআর