কোনো স্বৈরাচারকে বাঙালি সহ্য করেনি উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আজকে যেমন চতুর্দিকে কবরের মতো নীরব-শান্ত পরিস্থিতি, এরকম থাকবে না। বাঙালি ব্রিটিশদের বিদায় করেছে, পাকিস্তানিদের বিদায় করেছে। এবার বাঙালি স্বৈরাচারকে বিদায় করার সময় সমাগত।
Advertisement
বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের জনগণকে আমরা আহ্বান জানাব, আপনারা রাজনৈতিক দলের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং আইনের শাসন কায়েম করা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই কর্তব্য।
তিনি বলেন, সারাদেশে দুই নম্বরের জয়ধ্বনি চলছে। এখন বিএনপি কয় নম্বর দল হবে সেটা তাদের নিজেদের নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের প্রিয় দল বিএনপি, ৩০ বছর যাবত আমরা এই দল করছি। আজ সেই দলের নেত্রী দুই বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে। আমরা নীরবে চুপচাপ করে বসে আছি। কই রাজপথে তো আমরা এর কোনো সংগ্রামী প্রতিবাদীবার্তা দেখতে পাইনি।
Advertisement
বাংলাদেশ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে হাফিজউদ্দিন বলেন, কিছু দিন আগে খোদ ঢাকা শহরে ভোট ডাকাতি হয়ে গেল। এখানে এত লোক উপস্থিত, কেউ ভোট দিতে পারেনি। সাধারণ জনগণ কেউ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়ে গেছে। সবশেষে লুটপাটের ভাগ নিচ্ছে খোদ সরকার। অদূর ভবিষ্যতে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে অগ্রগামী হচ্ছে। কেন স্বাধীন দেশে এই অবস্থা হলো? আজকে এই ভাষার মাসে দাঁড়িয়ে আমরা কি শুধু অশ্রু বিসর্জন করব? গণতন্ত্র নেই সেজন্য শুধু দুঃখ প্রকাশ করব? নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কিছুই করার নেই?
তিনি বলেন, আজকে বড় বড় উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা কচুরিপানা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কচুরিপানায় নাকি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র যারা আমাদের সব কিছু নিয়ে নিয়েছেন, তাদের দেয়ার মতো আমাদের কাছে অবশিষ্ট আর কিছু নেই। পদে পদে তাদের আধিপত্যের মুখে আমরা। তাদের সাথে নাকি আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আজকে যেমন চতুর্দিকে কবরের মতো নীরব-শান্ত পরিস্থিতি, এরকম থাকবে না। বাঙালি কোনো স্বৈরাচারকে সহ্য করেনি। ব্রিটিশদের বিদায় করেছে, পাকিস্তানিদের বিদায় করেছে। এবার বাঙালি স্বৈরাচারকে বিদায় করার সময় সমাগত। দেশের জনগণকে আমরা আহ্বান জানাব, আপনারা রাজনৈতিক দলের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং আইনের শাসন কায়েম করা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই কর্তব্য।
তিনি বলেন, এই দেশে স্বাধীনতাযুদ্ধে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্নে বিভোর, তখন সাধারণ মানুষ সৈনিকদের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছিল। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের শুভসূচনা করছে এবং দেশকে স্বাধীন করেছে। আবার সময় এসেছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করার। এই মুক্তিযুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও সাধারণ মানুষ অংশ নেবে। বিএনপি এবং অন্যান্য সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আহ্বান জানাব, যদি দেশনেত্রীর মুক্তি চান, গণতন্ত্রের মুক্তি চান, আপনারা স্ব-উদ্যোগে রাজপথে নেমে আসবেন।
Advertisement
বর্তমান সরকারকে ‘দুর্বল সরকার’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে যে ব্যাংকসমূহ দেওলিয়া হয়ে যাবে। তারা বলে দিয়েছে আপনাদের কচুরিপানা খেতে হবে। তারা বলে দিয়েছে এই দেশে জনগণের আর ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। তারা কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আশা করেছিলাম এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে বিএনপি রাজপথে নামবে। দুইজন সম্ভাবনাময় তরুণকে আমরা নামিয়েছিলাম ভোটের মাঠে। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রশাসনের দাপটের জন্য জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেনি। যদি গণতন্ত্র চান যদি সিকিমের মতো অবস্থায় পড়া থেকে মুক্তি পেতে চান, যদি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান, তবে এই সব বাধাকে আমাদের উপেক্ষা করতে হবে। রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে এবং এর মাধ্যমেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।
‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’র সভাপতি কালাম ফয়েজীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, কৃষক দলের সদস্য লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
কেএইচ/এইচএ/এমকেএইচ