দেশজুড়ে

সন্দ্বীপে কলাগাছে বানানো শহীদ মিনারে খুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা

দেশের মূলভূখন্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সাগরকন্যা খ্যাত সন্দ্বীপ। সমুদ্রবেষ্টিত উপজেলা সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত পশ্চিম সারিকাইত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের ইচ্ছে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর। কিন্তু আশপাশে নেই কোনো শহীদ মিনার। মহান একুশের এই দিনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা তো জানাতেই হবে। তাই কলাগাছ দিয়েই শহীদ মিনার গড়লেন তারা। আর কলাগাছের তৈরি এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে ভাষা শহীদদের প্রতি তাদের অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন।

Advertisement

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাষা শহীদদের প্রতি এভাবেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেঘনা নদীর পাড়ে পশ্চিম সারিকাইত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। শহীদ মিনারটি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন ‘ইচ্ছে শক্তি স্পোটিং ক্লাব’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচখন্ড কলাগাছ মাটিতে পুঁতে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনারের পাঁচটি স্তম্ভ। রঙিন কাগজে দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে প্রতিটি স্তম্ভ। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ সাজাতে রঙিন কাগজ কেটে নিজেরাই তৈরি করেছে বাহারি ফুল। কাগুজে ফুল, বিভিন্ন রঙের বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে শহীদ মিনার ও তার বেদি।

পশ্চিম সারিকাইত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সম্পদ দাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই আমরা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। প্রতিবছর ইচ্ছে শক্তির ভাইয়েরা আমাদের বিদ্যালয়ে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দেন।

Advertisement

ইচ্ছে শক্তি স্পোটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। ভাষা শহীদদের এই আত্মত্যাগের কথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হলে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের এর ইতিহাস জানাতে হবে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। আমাদের এলাকায় শহীদ মিনার না থাকায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা প্রতিবছর এ আয়োজন করে থাকি। এখানে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণে সবার সহযোগিতা চাই।

পশ্চিম সারিকাইত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী আবুল কাশেম বলেন, শহীদ মিনার মূলত একটা প্রতীক মাত্র। তাই ইটের হোক আর কলা গাছেরই হোক, শ্রদ্ধা নিবেদনটাই মূখ্য। এটা করতে পেরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক তৃপ্ত হয়েছে, এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। এখানে সরকারিভাবে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাই।

সন্দ্বীপ উপজেলা বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার সভাপতি নুরুন নবী রুমী বলেন, ছোট্ট সোনামনিদের ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এ আয়োজনটি ইতিবাচক এবং প্রশংসার দাবিদার। এর ফলে তাদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টি হবে। তিনিও এ বিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান।

এমএফ/পিআর

Advertisement