নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার উদয়পুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় নিজের গ্রামে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খেলন তালুকদার নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের প্রয়াত বসন্ত তালুকদারের ছেলে।
Advertisement
দুর্গম হাওরের উদয়পুর গ্রামে স্কুল, হাট-বাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও স্থায়ী শহীদ মিনার ছিল না। খেলন তালুকদার উদয়পুর গ্রামের নিজ বাড়িতে শহীদ মিনার নির্মাণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রান্তোষ সামন্ত জানান, গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো শহীদ মিনার নেই। এই শহীদ মিনারটি স্থানীয়দের মাঝে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। খেলন তালুকদারের উদারতায় শহীদ মিনারটি নির্মাণ হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের নিয়ে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরি শেষে সেখানে পুস্পস্তবক অর্পণ করা সম্ভব হয়েছে।
উদয়পুর গ্রামের যুবক অসীম সরকার বলেন, আগে নিভৃত এ পল্লীতে শহীদ মিনার ছিল না বলে মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হতো না। এখন এখানে শহীদ মিনার হয়েছে বলে এখানকার শিশুরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে।
Advertisement
খেলন তালুকদারের ছেলে সুব্রত তালুকদার জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা বেশ কয়েক মাস জমিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন ২০০৮ সালে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। এখানকার কোমলমতি শিশু ও তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস ও জ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে এবং শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর সুবিধার্থে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন খেলন তালুকদার। সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন দেখে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার।
নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হরিধন সরকার শুক্রবার সকালে ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জানান, তিনি ক্রমান্বয়ে ইউনিয়নের সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করবেন। বিশাল জায়গা জুড়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না তিনি। ইউনিয়ননের বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঘাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সম্প্রতি দেড় লাখ টাকা টিআর থেকে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কামাল হোসাইন/আরএআর/পিআর
Advertisement