জাতীয় বা বিশেষ দিবস ছাড়া রাজবাড়ীর অনেক সরকারি দফতরে উত্তোলন হয় না জাতীয় পতাকা। বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে অবমূল্যায়ন হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বাহক জাতীয় পতাকার।
Advertisement
এদিকে পতাকা উত্তোলনের নীতিমালা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষ বলছেন, বহু আন্দোলন-সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা। এই পতাকার মাধ্যমে সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে। সেই জাতীয় পতাকা নিয়মিত উত্তোলন না করে সেটির অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক বলছেন, জেলার অনেক সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। প্রতিটি দফতরপ্রধানদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন। সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন।
জাতীয় ও বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। সম্মান প্রদর্শনের জন্য দেয়া হয় সালাম। কিন্তু স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারি দফতরগুলোতে উত্তোলন করা হচ্ছে না পতাকা। রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের আওতাধীন অনেক দফতর উত্তোলন করে না জাতীয় পতাকা। এর মধ্যে রাজবাড়ীর আধুনিক সদর হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা ও সদর উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, রাজবাড়ীর প্রধান ডাকঘর (পোস্ট অফিস), সদর উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, টেলিফোন ভবন, ওজোপাডিকো (বিদ্যুৎ) অফিসসহ বিভিন্ন দফতর।
Advertisement
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ এ বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও বিশেষ দিবস ছাড়াও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিস সমূহে যেমন, রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি, সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সচিবালয় ভবন সমূহ, হাইকোর্টের অফিস সমূহ,জেলা ও দায়রা জজ আদালত সমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/ কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ অফিস সমূহ, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্ট অফিস সমূহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এই রকম অন্যান্য ভবনে সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত ভবন সমূহে সকল কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে।’
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দফতরপ্রধানদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি জেনে তাৎক্ষনিক কেউ কেউ পতাকা উত্তোলন করেন। আবার অনেক দফতরে এখন পর্যন্ত উত্তোলন হয়নি পতাকা। তবে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে জেলার কয়েকটি সরকারি দফতরপ্রধানদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সচেতন মহলের ভাষ্য, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা দেশের অস্তিত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা। অথচ রাজবাড়ীর সরকারি অফিসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। এতে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। পতাকার সঠিক সম্মান তারা দিতে পারছেন না। তাই জেলা প্রশাসন থেকে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে তদারকি করা উচিত বলে তারা মনে করেন। এছাড়া শুধু জাতীয় বা বিশেষ দিবসই নয়, প্রতি কর্মদিবসে যথাযথ নিয়মে সকল অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দাবি তাদের।
সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মো. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তার অফিসে নিয়মিত পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা পরিষদের আওতাধীন হওয়ায় উপজেলা পরিষদ নিয়মিত উত্তোলন করায় তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করেন না। তবে জাতীয় দিবসগুলোতে তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
Advertisement
রাজবাড়ী প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বি এম নাজমুল হুদা বলেন, সবাইকে বলা আছে এবং প্রতিদিনই পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলন ছিল না প্রসঙ্গে বলেন, অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। এ কারণে হয়তো উত্তোলন করা হয় না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, জাতীয় পতাকা কারা কারা উত্তোলন করতে পারবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সে নিয়মে তার অফিস পড়ে না। শুধুমাত্র জাতীয় দিবসে তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুন্নাহার চৌধুরী বলেন, তারা শুধু বিশেষ দিনগুলোতে পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলন করবে। এতে কোনো বিধিনিষেধ নাই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিষয়টি এভাবেই উল্লেখ আছে। কিছু কিছু অফিস প্রতিদিন এবং তারা শুধু বিশেষ দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ এর বিধান অনুযায়ী প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে প্রতিটি কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতেও পতাকা উত্তোলিত হবে। রাজবাড়ী অনেক সরকারী অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না, এ বিষয়ে এর আগে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। জেলা উন্নয়ন সমন্ময় সভায় সকল সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। সেই সভায় সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যে, প্রতিটি কর্মদিবস, বিশেষ জাতীয় দিবস এবং সরকারি দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকে। সেই সব দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে প্রতিটি দফতরপ্রধানদের সাথে কথা বলবেন এবং সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।
রুবেলুর রহমান/এমএআর/জেআইএম