প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় এশিয়ামুখী ফ্লাইট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কান্তাস ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জেটস্টার। বৃহস্পতিবার হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোতে অন্তত তিন মাসের জন্য কম ফ্লাইট পরিচালনার কথা জানিয়েছে তারা।
Advertisement
কান্তাস জানিয়েছে, আগামী তিনমাস তারা এশিয়ায় ১৬ শতাংশ কম ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তাদের সাংহাইমুখী সব ফ্লাইট বাতিল এবং হংকং-সিঙ্গাপুরমুখী ফ্লাইট কমানো হয়েছে।
সাশ্রয়ী বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠান জেটস্টার জানিয়েছে, অন্তত মে মাস শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এশিয়ায় ১৪ শতাংশ কম ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এসব ফ্লাইটের রুট মূলত জাপান, থাইল্যান্ড ও চীনের মূল ভূখণ্ডমুখী।
কান্তাসের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জয়েস জানান, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এশিয়ায় যাত্রী-চাহিদা ব্যাপক হারে কমে গেছে। এর প্রভাবে ২০২০ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে।তিনি জানান, করোনা সংকটের কারণে কান্তাস এয়ারলাইন অন্তত ১৮টি বিমান বসিয়ে রেখেছে। এই সময়ের মধ্যেই কর্মীদের বার্ষিক ছুটি কাটাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এশিয়ার বাইরে নিউজিল্যান্ড রুটেও কিছু ফ্লাইট কমিয়ে দেয়া পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির।
Advertisement
অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, এদের সবাই কোনো না কোনোভাবে উহান (করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল) থেকে এই ভাইরাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বহনকারী।
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনফেরত নাগরিকদের সরাসরি দেশে প্রবেশ বন্ধ রেখেছে অজি সরকার। তবে যারা অন্তত ১৪ দিন চীনের বাইরে রয়েছেন এবং শরীরে সিওভিআইডি-১৯’র কোনও লক্ষণ নেই, তারা নির্বিঘ্নে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পারবেন। যারা ১ ফেব্রুয়ারির আগে চীন থেকে বেরিয়েছেন, তাদের জন্যেও এ প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।
অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা চীনের বাইরে অন্তত ১৪ দিন তৃতীয় কোনও দেশে কাটিয়েছেন তারাও অস্ট্রেলীয় সীমানা পার হতে পারবেন। এছাড়া, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডের জন্যই প্রযোজ্য, হংকং-ম্যাকাওয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলো এর বাইরে থাকবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশে আরও ১০৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ১১২ জনে। এছাড়া, চীনের বাইরে মারা গেছেন অন্তত আটজন। এর মধ্যে হংকং ও ইরানে দুইজন করে এবং তাইওয়ান, জাপান, ফ্রান্স ও ফিলিপাইনে একজন করে মারা গেছেন।
Advertisement
বুধবার নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন। তবে এটি তার আগে দিনের চেয়ে ১ হাজার ৬৯৩ জন কম। হুবেইয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৩১ জনে। সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৬২ জনে।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রমোদতরী প্রিন্সেস ডায়মন্ডে। এই প্রমোদতরীতে ৬২১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ প্রমোদতরীটিতে ২২০ জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ছিলেন। এর মধ্যে ১৫০ জনেরও বেশি বৃহস্পতিবার নিজ দেশে ফিরেছেন।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স
কেএএ/এমএস