আন্তর্জাতিক

নাগরিকত্ব প্রমাণের আইনি লড়াইয়ে জমি-টাকা সব শেষ জাবেদার

জীবনযুদ্ধে বহুদিন ধরেই লড়ছেন আসামের বক্সা জেলার বাসিন্দা জাবেদা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী রেজ্জাক আলি অসুস্থ অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন। ফলে সংসার চালাতে উপার্জন করতে এখন বেরোতে হচ্ছে বছর পঞ্চাশের ওই নারীকেই। তবু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মরার উপর খাঁড়ার ঘা পড়ল তখনই যখন তিনি জানতে পারলেন জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকায় (এনআরসি) তিনি নাকি বিদেশি ঘোষিত হয়েছেন। না, তারপরেও দমে যাননি তিনি। নিজের এবং নিজের পরিবারের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে জাবেদা বেগম দ্বারস্থ হয়েছিলেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের। কিন্তু মামলা হেরে গেলেন তিনি।

Advertisement

আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল তাকে বিদেশি আখ্যা দিয়েছেন, নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলে তার এখন একমাত্র অবলম্বন সুপ্রিম কোর্ট।

জাবেদা বেগমের সংসারে স্বামী ছাড়াও তিন মেয়ে ছিল। যদিও তাদের মধ্যে এক মেয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এবং অপরজন নিখোঁজ। সংসারে এখন সন্তান বলতে একটিই, বছর পাঁচেকের আসমিনা। আর তাই কোলের অবলম্বনটির কথা ভেবেই আইনি লড়াই লড়ছেন জাবেদা। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে কী হবে আসমিনার ভবিষ্যৎ, তা নিয়েই ভাবনার পাহাড় চেপে বসেছে তার মাথায়।

গোয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ওই নারী ও তার পরিবারকে ২০১৮ সালে ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষণা করেছিলেন। পরে নাগরিকপঞ্জি তালিকায়ও স্থান হয়নি তাদের। টানা এক বছর নিয়মিত আদালতে ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু তারপরেও নিজের পরিবারের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। ভারতের হাইকোর্ট জানিয়েছেন, জাবেদার জমির কর দেয়ার কাগজ, ব্যাংকের নথিপত্র এবং প্যান কার্ড এসব তার নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।

Advertisement

‘আমার যা ছিল তা আমি প্রায় সব খরচ করে মামলা চালিয়েছি। এখন আমার কাছে আইনি লড়াইয়ের জন্যে আর কোনও সংস্থান নেই’, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন জাবেদা বেগম। মামলা লড়ার খরচ জোগাড়ের জন্যে নিজের তিন বিঘা জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

আসামে জাবেদা বেগমের মতোই আরও অনেক মানুষই রাতারাতি বিদেশি বলে ঘোষিত হয়েছেন। তারা এখন বুঝতে পারছেন না নিজেদের দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছেন নাকি নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই করবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই আসামে যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ হয়েছে সেই চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ গেছে।

ভিডিওটি দেখুন...

সূত্র : এনডিটিভি।

Advertisement

জেডএ/জেআইএম