জাতীয়

দেশে কি দুর্ভিক্ষ চলছে, কচুরিপানা খেতে হবে : রওশন এরশাদ

কচুরিপানা খাওয়ার বিষয়ে গবেষণা করা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘দেশে কি দুর্ভিক্ষ চলছে? যে আমাদের কচুরিপানা খেতে হবে? আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান সাহেব মানুষকে কচুরিপানা খেতে উপদেশ দিয়েছেন। গরু তো ঘাস খায়, ঘাসেও ভিটামিন রয়েছে, তাহলে আমরা কেন ঘাস খাচ্ছি না?’

Advertisement

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও সংসদের সমাপনী ভাষণের ওপর বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে আজ কচুরিপানা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী তার গতকালের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা করেন। আমি কি বলেছি, বাংলার মানুষ আপনারা সবাই কচুরিপানা খান? আমি কি বাংলার মানুষ নই? আমার বাবা-মা কি বাংলার মানুষ নন? এটা কী ধরনের কথা?’

দেশে নারীর ক্ষমতায়ন কোথায়? প্রশ্ন তুলে রওশন এরশাদ বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, শিশু ধর্ষণ হচ্ছে, তাহলে কোথায় নারীর ক্ষমতায়ন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ নেতা ভাগ্যক্রমে হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী আপনি নির্ধারিত, সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, কিন্তু আমি তো ভাগ্যক্রমে হয়েছি। আমার বদলে অন্য কেউও হতে পারতো। এটা দেখিয়ে তো নারীর ক্ষমতায়ন বলা যাবে না। কেননা, আমরা সংসদে মাত্র কয়েকজন নারী, প্রায় সবাই তো পুরুষ। তাছাড়া প্রতিনিয়ত গ্রামগঞ্জে সর্বত্র নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিত, অত্যাচারিত হচ্ছে, তাহলে এটাকে কী বলা চলে নারীর ক্ষমতায়ন?

Advertisement

তিনি বলেন, দেশে ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে, হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তো এটা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই, ব্যাংকে লিকুইড মানি নেই। দেশে ব্ল্যাক মানি সাদা করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংসদে অনুপস্থিত থাকায় তাকে একহাত নিয়ে রওশন বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তো প্রায় বিদেশে থাকেন, তাকে সংসদেও দেখি না। তাহলে কীভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে?

তিনি বলেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী বদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থাও যদি পরিবর্তন হয় তাহলে তো অরাজকতা দেখা দেবে। আগে শিক্ষার্থীদের জন্য গাইডবই ছিল, বর্তমানে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে গাইড পাবে, শিক্ষকরা কীভাবে তাদের গাইড করবে, এ ধরনের পরিবর্তন হলে শিক্ষাব্যবস্থায় নিশ্চয় অরাজকতা দেখা দেবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী না থাকায় তা বলে তো কোনো লাভ নেই। তিনি শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশের বড় বড় হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না, তো কমিউনিটি ক্লিনিকে কোথা থেকে ডাক্তার থাকবে? কোথায়ও ডাক্তার থাকে না, থাকে একজন ঝাড়ুদার ও একজন গার্ড।

Advertisement

তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা রাত জেগে ফেসবুক দেখে, তাদের পড়াশোনা হচ্ছে না, সারারাত ফেসবুক দেখে চোখে কালি পড়ে যাচ্ছে। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

ফলমূল ও শাক-সবজি ফরমালিনমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে রওশন বলেন, বাজারে সব ফলমূল শাক-সবজি বিষাক্ত, ফরমালিনযুক্ত।

তিনি বলেন, রাজধানীতে সর্বত্র মশা, কথা বলতে গেলে মুখের মধ্যে মশা ঢোকে, সিটি করপোরেশন তো কোনো কাজ করে না। মশা মারার জন্য কর্মী থাকলেও কেউ কাজ করে না। তাহলে মশা মরবে কীভাবে। এছাড়া গার্ভেজগুলোতে যা ময়লা, দুর্গন্ধ তাতে পরিবেশ কীভাবে ভালো থাকবে। যদি এমন মশা থাকে তাহলে আবার ডেঙ্গু আসবে। এভাবে চললে আমরা কেন ট্যাক্স দেব। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে একদিন গোপনে বের হয়ে জনগণ কতটা অসুবিধা- দুরবস্থায় বসবাস করছে তা দেখার আহ্বান জানান।

‘ওয়াসার পানি এত নোংরা যে খাওয়া তো দূরের কথা, আপনি গোসল করতেও পারবেন না। অথচ মানুষ এই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে’,- যোগ করেন তিনি।

এইচএস/জেডএ/এমকেএইচ