মৌলভীবাজারে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ চা বাগান। সম্প্রতি বাগানগুলোতে প্রবেশ করতে পর্যটকরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে সাইন বোর্ড দিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের কারণে বাগানে প্রবেশ ও ছবি তুলতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন পর্যটকরা।
Advertisement
জানা যায়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে সারি সারি চা বাগান। বাগানের সবুজ সৌন্দর্য সব বয়সী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ বাগান দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। বাগানের পাশাপাশি রয়েছে লেক। যা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে সেচ দেওয়ার জন্য। লাল, সাদা শাপলা আর পদ্মফুলসহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ ও পাখির কিচিরমিচির লেকগুলোকে দিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য।
বাংলাদেশ চা বোর্ড জানায়, সারাদেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে ৯২টি মৌলভীবাজারে। প্রতিটি বাগানের ভেতরে লেক রয়েছে। সবুজ টিলার বাঁকে দৃষ্টিনন্দন লেক চা বাগানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। পর্যটকরা জানান, চা বাগানে ঢুকতে ও ছবি তুলতে বাধা দেয়া হয় তাদের। কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে তারা প্রবেশ না করে ফিরে যান। মাঝে মাঝে বাগানের প্রবেশমুখে দায়িত্বরতদের কাছে লাঞ্ছনার শিকারও হতে হয়।
কুলাউড়া উপজেলার রেহানা বাগানে সপরিবারে গিয়েছিলেন আব্দুর রব। তিনি বলেন, ‘খুব ভোরে আমরা চা বাগানে যাই। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বাধা দেয়।
Advertisement
শ্রীমঙ্গল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ভুরভুরিয়া চা বাগান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাগান কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে সাইন বোর্ড টানিয়ে পর্যটক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি ছবি তুলতেও বারণ করছে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ মুছা বলেন, ‘চা বাগান দেখতেই পর্যটকরা আসেন। তারা ফিরে গেলে এলাকার পর্যটন শিল্প বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত সমাধান করা।’
গ্রীনলিফ গেস্ট হাউস অ্যান্ড ইকো ট্যুরিজমের পরিচালক এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘বাগানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় পর্যটকরা ফিরে যাচ্ছেন। পর্যটকরা ফিরে যাওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এতে এলাকার পর্যটনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে।’
নিসর্গ ইকো রিসোর্টের পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘আমরা অনেকবার বাগান মালিকদের সাথে কথা বলেছি। তারা কোনোভাবেই এটা গ্রহণ করছেন না। আমরা নির্দিষ্ট ফি দিতেও রাজি আছি। বাগান মালিকরা বলছেন, তাদের গোপনীয়তা থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথেও আলাপ করেছি।’ বাংলাদেশ (সিলেট ভ্যালি) চা সংসদের চেয়ারম্যান জি এম শিবলি বলেন, ‘চা বাগান একটি ইন্ডাস্ট্রি। এখানে সাধারণ জনগণকে ঢুকতে দিলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। গাছের ডাল বা পাতা ছিঁড়লে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার ওপর অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। সরকারি নীতিমালায়ই আছে, চা বাগানে অন্য কিছু করা যাবে না।’
Advertisement
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘আমরা শুনেছি, চা বাগানে পর্যটকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। আমরা বাগান মালিক ও ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পর্যটকদের প্রবেশের ব্যবস্থা করবো। পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা হবে।’
রিপন দে/এসইউ/পিআর