দেশজুড়ে

ফিরে এসে না ফেরার গল্প শোনালেন দুই পর্যটক

ওরা পাঁচবন্ধু। থাকেন ঢাকার মিরপুরে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নেন বান্দরবানের রুমা উপজেলার সুউচ্চ পাহাড়গুলো ট্র্যাকিং করবেন। এটাই তাদের প্রথম ট্র্যাকিং নই, এর আগে আরো কয়েকবার তারা বান্দরবানের সুউচ্চ পাহাড়গুলোতে ট্র্যাকিং করেছেন। কিন্তু এবার ট্র্যাকিং করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতার শিকার হলেন তারা। আর এ অভিজ্ঞতার কথা জাগো নিউজকে বলেন রুমা থেকে ফিরে আসা বন্ধুরা।বরাবরের মতোই ট্র্যাকিংয়ের সব সরঞ্জামাদি নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাসে চেপে পরদিন সরাসরি রুমায় চলে যান জোবায়ের, মুন্না, সাগর, প্রিতম ও ঈদ। উদ্দেশ্য একটাই রুমার চ্যাপলং দেখা। রুমা বাজারে পৌঁছে পাঁচ বন্ধু সেনাবাহিনীর কাছে নাম রেজিস্ট্রি করেন। তারপর একে একে পাহাড়ের উপরে প্রাকৃতিক লেক বগালেক দেখা। প্রাকৃতিক হ্রদে গাঁ ভিজিয়ে নেয়া। বগালেকের অপূর্ব সৌন্দর্যে বিমোহিত হন তারা। কিন্তু সেই সৌন্দর্যের মায়াজালে আবদ্ধ না হয়ে সবাই ছুটে যান দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতমালা কেওক্রাডং দেখতে। সুউচ্চ পাহাড়ে ট্র্যাকিং করেন তারা। তারপর তাদের গন্তব্যস্থল পাসিংপাড়া। অপহৃদের বন্ধু সাগর ও প্রিতম জাগো নিউজকে জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত আদিবাসীদের পল্লী পাসিংপাড়ায় বিশ্রাম নেন এবং সেখান থেকেই দৃশ্যপট উপভোগ করেন সবাই। পাসিংপাড়ার কঙসাই ম্রোকে নিয়ে জাদুছড়ি পাড়ায় যান তারা। বাংলাদেশের খরস্রোতা রাইক্ষ্যং খাল দেখার জন্যই পাসিংপাড়ায় যাওয়া। আমাদের গন্তব্য থেমে থাকেনি।তারা জানান, জাদুছড়ি পাড়ায় দুই দিন অবস্থানের পরেই ৩ অক্টোবর নিখোঁজ জুবায়ের ভাই সকাল ১০ টার দিকে সিদ্ধান্ত নেন সবাই চ্যাপলং ঝর্ণা দেখতে যাবেন। প্রিতম সাহার অসুস্থতার কারণেই প্রিতম, ঈদ এবং আমি (সাগর) সিদ্ধান্ত নিই ফিরে যাবো কিন্তু গাইড মাঙসায়, মুন্না এবং জুবায়ের ভাই তিনজন সিদ্ধান্ত নেন সেপ্রুপাড়ার নিচে চ্যাপলং ঝর্ণা দেখতে যাবেন।জুবায়ের ও মুন্না ভাইকে বিদায় দিয়ে আমরা সকাল ১০টার দিকে পাসিং দাদার স্ত্রীকে নিয়ে পাসিংপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিই। ৩ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে পাসিংপাড়ায় পৌঁছাই। পরে বিকেল ৫টার দিকে পাসিং কারবারি তার স্ত্রীকে ফোনে জানান, আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জুবায়ের, মুন্না এবং গাইড মাঙসায়কে ভারতের মিজোরামের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জাদুছড়ি এলাকার মেম্বরের স্ত্রী দেখেই ফোনে কারবারিকে জানান। বন্ধু জুবায়ের এবং মুন্নাকে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পাসিং কারবারিকে প্রশাসনের লোকজনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করলে তিনি প্রশাসনকে জানান।এখানেই শেষ নয় সাগরের কথা। সাগর দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানান, আমরা ফিরেছি ঠিকই কিন্তু বাকিরা ফেরেননি। তারাও আমাদের মতো নিরাপদে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসুক, এখন কামনা এটাই।গাইড মাঙসাইয়ের ভাই পাসিং ম্রো জানান, গাইড মাঙসাইসহ নিখোঁজ পর্যটকরা জীবিত আছেন। তবে সাত লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবিতে ছেড়ে দেবেন বলে আমাকে ফোনে জানান এএলপির সদস্যরা। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. চাহেল তস্তুরী জানান, নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।এমএএস/পিআর

Advertisement