ঢাকা ও রংপুরে দুইজন বিদেশি নাগরিক খুনসহ পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিস্টান মিশনের ফাদার লুই সরকারকে হত্যা চেষ্টার পর বাগেরহাটের মংলা ছাড়তে শুরু করেছে বিদেশিরা। ইতিমধ্যে একাধিক বিদেশি পর্যটকদের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। পার্গমার্ক নামে খুলনার একটি পর্যটন কোম্পানির ৪০ জন বিদেশির বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া মংলার দুইটি ট্যুর অপারেটরকে দেয়া বিদেশি পর্যটকদের অনুরূপ বুকিংও বাতিল করা হয়েছে। তবে পুলিশ বিদেশিদের নিরাপত্তায় ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ সুন্দরবনে আগত বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এদিকে, মঙ্গলবার সকালে মংলায় অবস্থানরত পাঁচ বৃট্রিশ নাগরিককে পুলিশি নিরাপত্তায় যশোর বিমান বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। খুলনার পার্গমার্ক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক নজরুল ইসলাম বাচ্চু জানান, দুই বিদেশি হত্যার সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রে। রিভারেইন ট্যুরস নামে ঢাকার একটি কোম্পানির একদল ইতালিয়ান পর্যটক আগামী ১২ অক্টোবর সুন্দরবন দেখতে বাংলাদেশে আসার সিডিউল বাতিল করেছে। মংলার বেসরকারি পর্যটন প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন লাইফ ট্যুর মালিক গোলাম রহমান বিটু জানান, বিদেশি হত্যায় সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আগামী নভেম্বর মাসের শেষে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি পৃথক পর্যটক দলের সুন্দরবনে ভ্রমণের সিডিউল থাকলেও তারা ইতিমধ্যে তা বাতিল করা হয়েছে। মংলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকালে ভলেনটিয়ার মাজরিন এনজিওতে কর্মরত তিন নারীসহ পাঁচজন বৃট্রিশ নাগরিক মংলা ছেড়েছেন। মংলা থানা পুলিশ তাদের বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। এরা হলেন, চার্জটেইন, মালি, এলিপ, মাইকেল ও ব্যারেন। তিনি আরো জানান, মংলা বন্দর এলাকায় প্রায় শত বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। বিদেশিদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিদেশির মধ্যে চীন, বৃটিশ, পাকিস্তান, ভারত, আমেরিকা, কোরিয়া, ইতালি, জাপানের নাগরিকই বেশি। এর মধ্যে মংলা ইপিজেডে ৩৮ জন, চায়না হারবার ড্রেজার কোম্পানীর ৩০ জন, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ১০ জন, ও নির্মাণাধীন সাইলোতে দুইজন বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকসহ নানা কারণে মংলা বন্দরে প্রতিদিনই অন্তত আরো ২০/২৫ জন বিদেশি অবস্থান করে থাকেন। অপরদিকে, মংলা বন্দরে আগত জাহাজ থেকে বিদেশি নাবিকরা মাঝে মধ্যেই নানা কারণে শহরে যাতায়াত করে থাকেন। এসব বিদেশিদের যাতায়াত ও প্রতিদিনের অবস্থান পুলিশকে অবহিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মংলা ইপিজেড ও শহরের একটি আবাসিক হোটেলে বিদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিদেশিদের কর্মস্থল ও বাসস্থানের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। হোটেলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে।কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে পুলিশ বিদেশীদের নিরাপত্তায় ব্যাপক সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা নিলেও বনবিভাগ সুন্দরবনে আগত বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক সুনীল কুমার বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। পূর্বের নির্দেশনাতেই বর্তমানে বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করছেন।বাগেরহাট/এআরএ/পিআর
Advertisement