আন্তর্জাতিক

চীনের ঠান্ডা বাতাসে হংকংয়ে করোনা ছড়ানোর গুজব

চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রবাহিত ঠাণ্ডা বাতাসে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দেশটির একজন আবহাওয়াবিদ এই গুজবকে ভিত্তিহীন বলে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় বলা হয়েছে, চীনের গুয়াংডং প্রদেশে চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রদেশে তাপমাত্রা নিচে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। সেই সময় উহান উৎপত্তি হওয়া নতুন করোনাভাইরাস হংকংয়ে ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপকভাবে এই গুজব ছড়িয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, হংকং থেকে ৯০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত হুবেই প্রদেশের উহান থেকে এই ঠাণ্ডা বাতাস হংকং-সহ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে আসবে।

গুজবের শেষ এখানেই নয়; বলা হচ্ছে, হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষের মরদেহ গণহারে পোড়ানোর কারণে উহানের বাতাস এখন এই ভাইরাসে পরিপূর্ণ। হুবেইয়ের রাজধানী এবং আশপাশের শহরগুলোরও একই অবস্থা।

Advertisement

এই গুজবের বার্তায় হংকংয়ের বাসিন্দাদের আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘরের দরজা, জানালা বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গুজবের বিস্তারকারীরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে হংকংয়ে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।

হংকং অবজারভেটরির সাবেক পরিচালক ল্যাম চিউ-ইং তার ফেসবুক পেইজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এই বার্তাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই গুজব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

ল্যাম চিউ-ইং বলেছেন, হংকং থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে উহান শহর অবস্থিত। যদি বাতাসের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়ায়, তারপরও কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর এটি দুর্বল হয়ে যাবে। এমনকি যখন দক্ষিণের দিকে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হবে; সেই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি নেই। এটি সাজানো গল্প। এতে বিশ্বাস করবেন না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দেশটিতে ১৪২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং প্রথমবারের মতো এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে একজন নিহত হয়েছেন।

রোববার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলেছে, করোনাভাইরাসে শনিবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২০০৯ জন; যা আগের দিনের তুলনায় কম। শুক্রবার দেশটিতে নতুন করে করোনা সংক্রমিত হিসেবে ২ হাজার ৬৪১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল।

Advertisement

ফলে চীনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে। চীনের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৬৪ জন। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত জাপানে; দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০৭ জন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কাউকে আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া যায়নি। তবে গত ৯ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মোট পাঁচ বাংলাদেশি প্রবাসী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।

সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স।

এসআইএস/এমকেএইচ