করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে বাংলাদেশকে চীন ৫০০ কিট উপহার দেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। চীনের এ দুঃসময়ে বাংলাদেশ যে সহমর্মিতা দেখাচ্ছে তা বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
Advertisement
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের জন্য মাস্ক, গাউন, ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লোভ ও স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই চিঠি ও স্বাস্থ্য সামগ্রী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মহানুভবতার সাধুবাদ জানাই আমরা। করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীনকে বাংলাদেশ যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। আমি একটি ভালো খবর দিতে চাই, চীনা দূতাবাস ৫০০ করোনাভাইরাস কিট বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে।
Advertisement
তিনি জানান, দু’পক্ষের কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। করোনাভাইরাসের কোনো সীমান্ত নেই। এ সময় বাংলাদেশ যে সহমর্মিতা দেখাচ্ছে তা বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।
চীনের জন্য সহমর্মিতামূলক সহায়তারাষ্ট্রদূতের হাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হস্তান্তর করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সহমর্মিতামূলক সহায়তা’ হিসেবে চীনের জন্য এসব সামগ্রী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চিঠি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ করোনাভাইরাসের আক্রমণে স্বজন হারানো চীনা পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। চীন সরকার কর্তৃক দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সঠিকভাবে সেবা প্রদানেরও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। চীন দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে কথা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পাশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং
Advertisement
পাশাপাশি চিঠিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নিমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩১২ জনকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বিমানের ওই পাইলটদের আর প্রবেশ করতে দিচ্ছে না অন্য দেশ। এতে বিপাকে পড়েছে বিমান।
তিনি জানান, চীনের বিভিন্ন শহরে অবরুদ্ধ আরও ১৭১ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় চীনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের আরও কিছুদিন সেখানে অবস্থান করার পর দেশে ফেরার পরামর্শ দেন।
ড. মোমেন বলেন, একমাত্র সিঙ্গাপুর ছাড়া কোথাও কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এছাড়া এই ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চীনা প্রকল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫০০ জন।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কাউকে আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া যায়নি। তবে গত ৯ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মোট পাঁচ বাংলাদেশি প্রবাসী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।
জেপি/এইচএ/পিআর