বিনোদন

আনন্দ-উৎসবে রঙিন চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের পরিবার দিবস

চলচ্চিত্রের কোথায় কী হচ্ছে, কোন তারকা কি চলচ্চিত্র নিয়ে আসছেন, কোন চলচ্চিত্র ভালো যাচ্ছে কিংবা মন্দ- এমন সব খবর যারা তুলে ধরেন পাঠক-দর্শকের সামনে তারা চলচ্চিত্র সাংবাদিক। রঙিন দুনিয়ার খবর তৈরি ও পরিবেশন করা এই পেশার জনপ্রিয়তা বহুকাল ধরেই। সেই জনপ্রিয়তার তাগিদেই ১৯৬৮ সালের ৫ এপ্রিল চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের জন্য গড়ে উঠে ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি’।

Advertisement

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেটির নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি’। ছোট করে যাকে ‘বাচসাস’ বলে ডাকা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই সাংবাদিক সংগঠনটি এখনো জনপ্রিয়তা নিয়ে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে পাঁচ শতাধিক সদস্য যুক্ত রয়েছেন, চলচ্চিত্রের নানা যুগের সাক্ষী হয়ে।

গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বনভোজনের আমেজে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাচসাসের পরিবার দিবস। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও সংগঠনটির সদস্যরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এই মিলনেমলায় অংশ নেন। সব মিলিয়ে প্রায় হাজারেরও অধিক মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো গাজীপুর হোতাপাড়ায় অবস্থিত খতিব খামার বাড়ি রিসোর্টে।

সকাল ৭ টা ও ৮টায় শিল্পকলা একাডেমি, এফডিসি এবং মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে হোতাপাড়ার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় বাচসাস সদস্যদের নিয়ে। সকাল ১০টার মধ্যেই বনভোজনের স্পট মুখরিত হতে শুরু করে সবার আগমনে। পরিবারসহ আসা সদস্যদের স্বাগত জানান সভাপতি ফাল্গুনী হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে বাচসাসের বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ।

Advertisement

এখানে সমিতির সদস্যরা পরিবার নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন। খেলাধুলা, নাচ-গান আর ছবি তোলার উৎসবে রঙিন হয়ে ছিলো দিনটি। সকালের নাস্তা নিয়ে কিছুটা অগোছালো আয়োজন লক্ষ করা গেলেও ব্যস্ত জীবনের ফাঁক গলে প্রিয়জনদের সঙ্গে খানিকটা অবকাশ যাপনের এই সুযোগ পেয়ে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা হয়ে উঠেছিলেন মাতোয়ারা।

অনুষ্ঠানে বাচসাসের সভাপতি ফাল্গুনী হামিদ বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেষ্টা ছিলো সব সদস্যের নিয়ে একটা বিশাল পরিসরে পরিবার দিবসের। সবাইকে সুন্দর একটি দিন উপহার দিতে পরিশ্রম করেছি আমরা। চমৎকার সময় কাটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আশা করছি সামনের দিনগুলো আরও সুন্দর আসবে বাচসাসের। পুরনো ঐতিহ্য ও সম্মানে বাচসাস আবারও সবার সমীহ কুড়াবে।’

সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাচসাস গৌরবের ৫২ বছরে পা দিয়েছে। সবাই একসঙ্গে আমাদের সংগঠনকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। পরিবার দিবস আমাদের কাছে বড় একটি উৎসবের মতো। সারা বছর এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি।’

বাচসাসের পরিবার দিবসে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে ছিল হাড়ি ভাঙা, দৌড় প্রতিযোগিতাসহ নানা রকম খেলাধুলা। অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সবার মন ভরিয়েছেন দিনাত জাহান মুন্নী, আসমা জাহান, বাচসাসের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য লিটন এরশাদের পুত্র লিমনসহ আরও অনেকেই।

Advertisement

তবে দিনশেষে র‍্যাফেল ড্র- এর আয়োজন আনন্দের ষোলকলা পূর্ণ করেছিলো। সকল বয়সের উপস্থিতিরা আগ্রহ নিয়ে নিজেদের কুপনের নাম্বার মিলিয়েছেন শেষ পুরস্কার বিজয়ী নাম্বারটি ডাকার পর্যন্ত।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও বাচসাসের পরিবার দিবস সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন নির্বাহী সদস্য লিটন এরশাদ, ইব্রাহিম খলিল খোকন, সহসভাপতি বাদল আহমেদ ও সৈকত সালাউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, অর্থ সম্পাদক মঈন আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত সাইফুল, দপ্তর সম্পাদক নিপু বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল আলম মিলন।

আরও ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শ্রাবণী হালাদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সুফিয়ান রতন, নির্বাহী সদস্য অঞ্জন রহমান, রেজাউল করিম রেজা, তুষার আদিত্য, ইরানী বিশ্বাস ও লিটন রহমান।

আয়োজন সফল করতে নানা দায়িত্বে বিশেষভাবে নিয়োজিত ছিলেন বাচসাস সদস্য শেখ সেলিম, মাসুম আওয়াল, নাজমুল আহসান তালুকদার, আল কাছির, সবুজ পারভেজসহ আরও অনেকেই।

অনুষ্ঠানটির পৃষ্টপোষকতা করেছে-মেরিল, স্টার সিনেপ্লেক্স, বিজিএমইএ, গানবাংলা, লাইভ টেকনোলোজিস, বঙ্গ, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, কোহিনূও ক্যামিক্যাল, স্বপ্ন, প্রাণ, ইগলু, স্কয়ার, ইউএস বাংলা,সজীব গ্রুপ, টিসিএল, ট্রান্সটেক হোটেল রিজেন্সি, হোটেল ভিস্তা বে, এটিএনবাংলা, নাগরিক টিভি ও দীপ্ত টিভি।

প্রসঙ্গত, বাচসাস পরিবার দিবসে দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই উড়ে আসে মন খারাপের একটি খবর। জানা যায় মুভি মোঘল খ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা মৃতের বিদেহি আত্মার জন্য শান্তি কামনা করেছেন। পুরো দিবসজুড়েই আলোচনায় ছিলেন চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের সোনার মানুষ এ কে এম জাহাঙ্গীর খান।

এলএ/পিআর