চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পরে থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, মেয়র পদে এবার চমক আসছে। তাইতো বাঘা বাঘা সব প্রার্থীকে পেছনে ফেলে দলের মনোনয়ন পেলেন নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী, যিনি নগরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ হলেও সব সময় থেকেছেন আলোচনার বাইরে।
Advertisement
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় তার প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৭ সালে কলেজ ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য পদে ফরম পূরণের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ১নং সেক্টরের বি এল এফ এর মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এ মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৭৩-১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। পড়াশোনার জন্যে ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। কিন্তু ৭৫ এর পট পরিবর্তনের কারণে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ লড়াইয়ে নেমে ফাইনাল পরিক্ষা দিতে পারেননি তিনি। পরে ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কার্য্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭-২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, ২০০৬-২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে পরিচিতি রয়েছে রেজাউল করিম চৌধুরীর। বর্তমানে তিনি নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Advertisement
চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলের প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে অস্বস্তি ছিল দলের মধ্যেই। এর বাইরে অন্যান্য প্রার্থীদের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরে, যা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে রয়েছে গ্রুপিং। এই একটি জায়গায় ব্যতিক্রম রেজাউল করিম চৌধুরী।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন জমিদার বংশ বহরদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন ইংরেজ শাসিত ভারত এবং পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও চট্টগ্রামে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বিলুপ্ত কমরেড ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তার বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া তার পূর্ব পুরুষেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ২৩টি মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। পারিবারিক জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক রেজাউল করিম। তার বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
আবু আজাদ/এমএসএইচ
Advertisement