বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির মানব উসাইন বোল্ট। মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে এ খেতাব অনেক নিজের করে নিয়েছেন এ জ্যামাইকান স্প্রিন্টার। অ্যাথলেটিকসকে বিদায় জানালেও আনুষ্ঠানিকভাবে তার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি আর কোনো দৌড়বিদ।
Advertisement
তবে দক্ষিণ ভারতের এ নির্মাণশ্রমিক প্রশ্নের মুখে তুলে দিয়েছেন বোল্টের রেকর্ডকে। এক জোড়া মহিষ নিয়ে দৌড়ে বোল্টের চেয়ে কম সময়েও ১০০ মিটার পার করেছেন ‘কাম্বালা জকি’ শ্রীনিবাস গৌড়া। মহিষ দৌড়ে ১৪২ মিটারের ধানক্ষেত্র মাত্র ১৩.৪২ সেকেন্ডে পার করেছেন গৌড়া। যা ভেঙে দিয়েছে খেলাটির ইতিহাসের ৩০ বছরের পুরনো রেকর্ড।
১৩.৪২ সেকেন্ডে ১৪২ মিটারের হিসেবে ১০০ মিটার যেতে গৌড়ার লেগেছিল ৯.৫৫ সেকেন্ড। যা কি না বোল্টের চেয়ে ০.০৩ সেকেন্ড কম। গৌড়ার এমন কীর্তির পর তার প্রতি উৎসাহী হয়েছে দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে তাকে ডাকা হয়েছে আনুষ্ঠানিক ট্রায়ালের জন্য। যেখানে ইলেকট্রিক মেশিনে মাপা হবে গৌড়ার গতি।
গৌড়ার গতিতে বিস্মিত হয়ে ভারতের সংসদ সদস্য শশী থারুর তাকে তুলনা করছেন উসাইন বোল্টের সঙ্গে। এ নিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘উসাইন বোল্টের চেয়েও দ্রুতগামী? কর্ণাটকের এই লোক মোষ নিয়ে ১০০ মিটার ৯.৫৫ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছে। ভারতের অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনকে বলছি তাঁকে নিজেদের অধীনে নিয়ে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বানাতে। জানি না এমন আরও কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে!’
Advertisement
তবে কাম্বালা একাডেমির প্রধান প্রফেসর কে গুনাপালা কাদাম্বা আবার বোল্টের সঙ্গে গৌড়ার তুলনা আনতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘অন্য কারো সঙ্গে তুলনাকে আমরা প্রশ্রয় দিতে রাজি নই। এসব পরীক্ষা করার জন্য তাদের (অলিম্পিক কমিটি) আরও উন্নত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে।’
শ্রীনিবাস গৌড়াও উচ্ছ্বাসে ভেসে যাননি তার এ কীর্তির পর। তিনি মূল কৃতিত্ব দিচ্ছেন তার সঙ্গী জোড়া মহিষকে। গৌড়ার ভাষ্যে, ‘আমি কাম্বালা ভালোবাসি। আমার এ সাফল্যের পেছনে দুটি মহিষেরই কৃতিত্ব বেশি। তারা খুব দ্রুত দৌড়েছে। আমি শুধু ওদের অনুসরণ ও পরিচালনা করেছি।’
গৌড়ার এ কৃতিত্বের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন নানান মত। একপক্ষ বলছে মূলত মহিষ দুইটির গতির কারণেই এত দ্রুত ১৪২ মিটার যেতে পেরেছেন ২৮ বছর বয়সী গৌড়া। তাদের মতো মহিষ দুটোই টেনে নিয়েছে গৌড়াকে। আরেকপক্ষ আবার গৌড়াকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন কাঁদামাটি যুক্ত ধানক্ষেতে এমন গতি ধরে রাখার কারণে।
কাম্বালা কীস্থানীয় ভাষায় কাম্বালা শব্দের অর্থ ‘কাঁদামাটিযুক্ত ধানক্ষেত’। কর্ণাটকার উপকূলীয় অঞ্চলে এমন মাঠে এক জোড়া মহিষ নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতাকেই মূলত কাম্বালা বলা হয়। সাধারণত ১৩২ থেকে ১৪২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এসব দৌড়ের মাঠগুলো।
Advertisement
পশুদের ওপর অত্যাচার হয়- এমন কথা উঠিয়ে এই দৌড় বন্ধের দাবি উঠেছিল বেশ কয়েকবার। এমনকি ২০১৪ সালে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল এ দৌড় প্রতিযোগিতা। তবে ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের আদালত কাম্বালাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কাম্বালা দৌড়ে এখনও পর্যন্ত ২৮টি পদক জিতেছেন শ্রীনিবাস গৌড়া।
এসএএস/এমকেএইচ