একুশে বইমেলা

‘প্রবাসে মেঘ-জ্যোৎস্না’য় দশ দিগন্তের অজানা সব গল্প

প্রতিমাসে তিন-চারটি বই পড়ি। এ মৌসুমেও শেষ করলাম ‘প্রবাসের মেঘ-জ্যোৎস্না’। বইটির লেখক জমির হোসেন। তিনি ইতালি প্রবাসী। প্রবাসের সুখ-দুঃখের জগতে যে ঢুকে পড়ছি, পড়ার আগেই তা বুঝতে পারলাম। দেশ ছেড়ে কেউ ভালো থাকে না। তাই প্রত্যেক প্রবাসীর এই কষ্ট না থেকে পারে না। জমিরও এর বাইরের নন।

Advertisement

বইটির অর্ধেকের বেশি রচনা পরদেশের জানা-অজানা বিষয়ে। ইতালি উন্নত দেশ। মানুষও সচেতন। তাই সেখানে সবাই চলে আইন মেনে। খাদ্যে ভেজাল নেই। রাতে নারীরা নিরাপদ। গভীর রাতেও কেউ নারীদের বিরক্ত করতে সাহস পান না। ইতালিয়ানরা শান্তিপ্রিয়। সাতপাঁচে তারা নেই। নোংরা রাজনীতি তারা জানে না।

অফিস চলে নিয়মানুসারে। ব্যক্তি পরিচয়-প্রভাব কাজে আসে না সেখানে। লেখক ভুল রাজনীতি, রাজনীতি ও বাসা ভাড়া, রাতের আঁধারে যে দেশে নারীরা নিরাপদ, একটি ইতালিয়ান পাসপোর্টের গল্প ইত্যাদি লেখায় তুলে ধরেছেন এমন চিত্র। সাথে সাথে তুলনা করেছেন বাংলাদেশকে। তথ্য-তত্ত্ব ও উপাত্ত দিয়ে জানিয়েছেন খাদ্যে বাংলাদেশ কতটা অনিরাপদ।

অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রবাসে ভুল রাজনীতি করছে। এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লেখক জমির দুটি দেশের তুলনা করে বোঝাতে চেয়েছেন, ইতালি থেকে বাংলাদেশ অনেক কিছু শিখতে পারে।

Advertisement

ভাবতে ভালো লেগেছে একটি বিষয়। জমির হোসেন ভ্রমণ ভালোবাসেন। ইতালির বাইরেও ঘুরেছেন। ভ্রমণ করেই থেমে নেই, ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন পাঠদের জন্য। একটু বিস্ময় থাকে, কারণ প্রবাসীরা ভ্রমণ তেমন করেন না অথবা ভ্রমণের সুযোগ হয় না। অর্থব্যয়, ছুটি ভ্রমণের বড় বাধা। জমির বাধাগুলো অতিক্রম করেছেন।

‘প্রবাসের মেঘ-জ্যোৎস্না’ পাঠের মাধ্যমে আমরা ঘুরে আসি ভেনিস কিংবা ইস্কিয়া দ্বীপ। ঘুরে আসি আটলান্টিকের তীরে অবস্থিত স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপ। দেখে আসি স্বপ্নের শহর লন্ডন। আমাদের ভালো লাগে। লেখক ভ্রমণের সঙ্গে স্থানের ইতিহাসও টেনেছেন। জমির আগামীতে ভ্রমণবিষয়ক একটি বই আমাদের উপহার দিতে পারে।

বই আলোচনায় বইয়ের ভাষা নিয়ে কথা না বললে কিছু কমতি থেকে যায়। জমিরের গদ্য সাবলীল। দীর্ঘদিন লিখলেই আত্মস্থ হয় এ ভাষা। শব্দচয়নও সাম্প্রতিক। পুরানো শব্দভাণ্ডার রচনাকে গ্রাস করেনি। উদাহরণস্বরূপ পাঠ করা যায় ‘মাকে বেশি মনে পড়ে’ রচনার অংশ : ‘প্রবাস মানেই একাকী জীবন। সব থেকেও যেন কেউ নেই।

আর যদি একেবারেই না থাকে সেটা কীভাবে মেনে নেয়া সম্ভব। আমি ভাবতে পারি না। ভীষণ কান্না পায়। আমি কাঁদি।’ বইয়ের উপাদান প্রবাস, ভ্রমণ ছাড়াও রয়েছে প্রকৃতি, স্বপ্ন, সংক্ষোভ, অঙ্গীকারপূর্ণ দিন। ‘প্রবাসের মেঘ-জ্যোৎস্না’ প্রকাশ করেছে তারুণ্যনির্ভর প্রকাশনী ‘চৈতন্য’। প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইমেলায় স্টল নং ২৫০-২৫১। সবাই বইটি পাঠ করতে পারেন। আশা করা যায়, বঞ্চিত হবেন না।

Advertisement

সেলিম মোরশেদ/এমআরএম/জেআইএম