জাতীয়

খিজির খান হত্যা : নেপথ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ

ধর্মীয় মতাদর্শের পার্থক্যের কারণেই খুন হয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পীর মুহম্মদ খিজির খান। প্রতি বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে অনুষ্ঠিত মাহফিলের তফসিরের সঙ্গে মতাদর্শের পার্থক্যের কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এর আগে, সোমবার রাতে মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটের নিজ বাসায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় খিজির খানকে। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের হাত-পা-মুখও বেধে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় মঙ্গলবার রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৭) দায়ের করেন নিহতের ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলাম। খিজির খান নক্সাবন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়ার একজন পীর ছিলেন। অনুসরণ করতেন নুরীকওম তরিকাহ। রহমতিয়া খানকাহ শরীফের ঢাকার শাখাটিও পরিচালনা করতেন তিনি। মধ্যবাড্ডার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ছিল তার খানকাহ শরীফটি। প্রতি বৃহস্পতিবার দরবারে মুরীদরা অংশ নিতেন ও জিকিরের আয়োজন করা হতো। নারী-পুরুষ একসঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত বন্দেগী করতেন সেখানে। খিজির খানের পাশের বাড়ির নিচেই দীর্ঘদিন ধরে ডাব-কলা বিক্রি করেন আতাউর রহমান। পাশাপাশি পাশের এরোমা রিয়েল স্টেটের কেয়ারটেকার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে মাহফিল হতো। সাদা পাঞ্জাবি আর সবুজ লুঙ্গি পরে এতে অনেকেই যোগ দিতেন। অনেক অফিসার শার্ট-প্যান্ট ইন করে দরবার শরীফে ঢুকতেন পরে সেখানে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করতেন। মাসখানেক আগে খিজির খানের মাহফিলে গিয়েছিলেন আতাউর রহমান। তফসির শুনেছেন খিজির খানের। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি সবসময় সৎ পথে চলার কথা বলতেন। সুদমুক্ত জীবন ধারণের কথা বলতেন। তবে তিনি হিন্দুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা পছন্দ করতেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলা পছন্দ করতেন না।’ এদিকে, এঘটনার পর মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, র্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজেদের মতো তদন্তের আলামত সংগ্রহ করেন। তদন্তকাজে তারা সবাই সম্পৃক্ত রয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ৩য় দিনেও জড়িতদের শনাক্তে কোন ক্লু বের করতে পারেনি কোনো সংস্থাই।  ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’, ‘তদন্ত চলছে’ শব্দ দুটি ছাড়া অন্য কোনো মন্তব্যও করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনেরা। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তিনটি কারণকে সামনে রেখে তদন্তকাজ করছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুস্তাক আহমেদ। কারণগুলো হচ্ছে সম্পত্তি, পাবিবারিক দ্বন্দ্ব আর ধর্মীয় মতাদর্শগত পার্থক্য। তবে খিজির খানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবার ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক কোনো শত্রু ছিল না। সবাই তাকে খুব ভালোবাসতেন। মতাদর্শ নিয়েও কারো কোনো অভিযোগ ছিল না।’ তাই মোটা দাগে ধর্মীয় মতাদর্শগত পার্থক্যের বিষয়টিই খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ডিবি সুত্র জানায়, তরিকাহ পন্থির বিরুদ্ধে যারা নানা সময়ে আন্দোলন ও কথা বলে তাদের প্রোফাইল যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) কিংবা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সম্পৃক্ততাও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকি ও গোপীবাগের পীর ফারুকের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল এমন সন্দেহভাজনদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। নিহতের সেজো ছেলে ডা. আহমেদ উল্লাহ্ বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে মুরিদ বেশে ৬-৭ জনকে সিড়ি দিয়ে  উপরে উঠতে দেখেছি। মুরিদ ভেবে আমি তাদের খেয়াল করিনি। কারণ প্রতিদিন এমন কয়েকজন মুরিদ আসেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, হত্যার ধরণ ও পরিকল্পনা দেখে বোঝা যায় তারা দীর্ঘদিন ধরে তার মাহফিলে উপস্থিত হয়ে তফসির শুনতেন। তারা দরগাহ এবং বাড়ির পুরো নকশা জানতেন। তানাহলে দ্রুততার সঙ্গে তিনতলায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধা এবং পরে ওজু খানায় নিয়ে হত্যা করা সম্ভব হতো না। এ ঘটনায় খিজির খানের নিয়মিত কয়েকজন মুরিদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি সূত্র। তবে এঘটনায় এপর্যন্ত কাউকে আটক করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলার তদন্ত কি পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে মুস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তবে হত্যার কারণ এখনি বলতে পারবো না। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের ডিসি মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তদন্তের উল্লেখযোগ্য আপডেট নেই।’ এআর/এসকেডি/পিআর

Advertisement