প্রথম করোনাভাইরাসে এক রোগী শনাক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ব্যস্ততম শহর চায়না টাউন বলতে গেলে খালি হয়ে গেছে। ব্যস্ততম এই শহরটি এখন পথচারী-শূন্য। বুধবার চীন থেকে লন্ডনে ফেরা এক নারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পথে বের হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন পর্যটক ও বাসিন্দারা।
Advertisement
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন বলছে, চীনের উহান শহরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত নয়জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বুধবার লন্ডনে এক নারী এই ভাইরাসে আক্রান্তের হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। আর লন্ডনে এই প্রথম কোনো ব্যক্তিকে করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা গেল।
লন্ডনে প্রথম কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চীনা-অধ্যুষিত চায়নাটাউন এখন পথচারী-শূন্য। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
গতকাল চীনা নাগরিক পরিচালিত শপিং মলগুলো পর্যটকশূন্য দেখা গেছে। ফুটপাথে লোকজনের দেখা নেই বললেই চলে। রেস্তোরাঁ, দোকান-পাটের বেঞ্চগুলো খালি পড়ে আছে। অথচ অন্য সময় সেন্ট্রাল লন্ডনের এই শহরটিতে পর্যটক ও স্থানীয়দের ভিড় লেগেই থাকে।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ওই নারীকে শহরের গে’স অ্যান্ড সেন্ট থমাস’স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চীন থেকে এসেছেন। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, চীনে আক্রান্ত হওয়ার পরই ওই নারী লন্ডনে এসেছেন।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস সন্দেহে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির ৭৫০ জন রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। আর একদিনে পরীক্ষা করানোর এই সংখ্যা অনেক বড়। যে কারণে জনগণের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
তবে সবচয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বিভাগের কর্মকর্তাদের এক স্বীকারোক্তির কারণে। গতকাল তারা জানান, ভাইরাস আক্রান্ত ওই নারীকে উবার ট্যাক্সির মাধ্যমে ব্যস্ততম এলাকার মধ্যদিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এক জরিপে দেখা গেছে, ১৪ শতাংশ ব্রিটেনবাসী বলেছেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে তারা চীনা ব্যক্তিদের সংস্পর্শ ত্যাগ করব। এক-চতুর্থাংশ বলেছেন, তারা করমর্দন এড়িয়ে চলবেন। এক-পঞ্চমাংশ বলেছেন, তারা গণপরিবহনে চলাচল পরিহার করবেন। প্রতি দশজনের তিনজন বলেছেন, তারা বড় ধরনের জমায়েত বা ছুটি কাটাতে বিমান ভ্রমণ পরিহার করবেন। দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি আক্রান্ত দেশ বা এলাকা থেকে দূরে থাকতে চান।
Advertisement
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার নতুন করে ১২২ জনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ১৩৮১। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের এই ভাইরাসকে গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি অভিহিত করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত তিনজন মানুষ মারা গেছে। এদিকের জাপানে নোঙ্গর করে রাখা একটি প্রমোদতরীতে নতুন করে আরও ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই প্রমোদতরীতে করোনাআক্রান্ত যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের সহকারী মন্ত্রী জেং ইশিন বলেন, ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ১ হাজার ১০২ জন চিকিৎসাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া হুবেই প্রদেশের অন্যান্য এলাকায় আরও ৪০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসা কর্মীদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছেই।
এসআর/পিআর