জাতীয়

হলুদ বসন্তে ভালোবাসার গোলাপি আভা

এমন বসন্ত কখনো আসেনি আগে। বাঙালির চিরায়ত বসন্ত বরণে এবার যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। হলুদ বসন্তে গোলাপি আভা ছড়িয়েছে ভালোবাসা দিবস। প্রকৃতি ও মানব মনের প্রেম একাকার হয়ে গেছে বসন্তের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবসে।

Advertisement

বসন্ত বরণে প্রকৃতির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আগেই। তবে আজ সাদরে বরণ করছে ঋতুরাজ বসন্তকে। সেই খুশিতে গাছের শাখে শাখে ফুটছে হরেক রকম ফুল। নগরের সিডিএ ভবন চত্বর, বিপ্লব উদ্যান, ওয়ার সিমেট্রি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস সহ নানান ফুল। বন্দর নগরের অনেক আমগাছেই এসেছে মুকুল। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া সহ ফাগুনের নানান ফুলের কলিরও দেখা মিলছে। শীতে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার গজাতে শুরু করেছে নতুন পাতা।

প্রকৃতির মতোই ফাগুনের প্রথম দিনটি চট্টগ্রামের নগরজীবনে নিয়ে এসেছে উৎসবের রঙ। সেই রঙ ছুঁয়ে গেছে নানা বয়সী মানুষের মধ্যে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই চট্টগ্রামে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। বাংলার চিরায়ত গান, নাচ, আবৃত্তি, কথামালাসহ নানা আয়োজনে মুখর নগরের জামালখান, সিআরবি শিরিষ তলা। এবার বসন্তের প্রথম দিনে ভালোবাসা দিবসও। তাই আনন্দ আয়োজনেও আছে ভিন্নমাত্রা। প্রেমিক যুগল আর তরুণ-তরুণীরা সেজেছে দুই রূপেই। তরুণীরা পরেছেন বাসন্তী আর লাল শাড়ি। সঙ্গে লাল গোলাপ হাতে ছেলেরা এসেছেন বাহারি পাঞ্জাবি পরে। ফয়স লেক, জাম্বুরী মাঠ, ডিসি হিল, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রামে বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত।

সকাল হতেই প্রায় সব বয়সীরাই ছুটে এসেছেন নগরের চেরাগীর এলাকার ফুলের দোকানে। প্রিয়জনের জন্য কিনেছেন পছন্দের ফুল। অনেকে ছুটছেন গিফট গ্যালারি আর উপহারের দোকানগুলোতে। সে সঙ্গে চট্টগ্রামের পার্ক, রেস্তোরাঁ, পাঁচ তারকা ও তিন তারকা হোটেল এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে রাখা হয়েছে নানা আয়োজন।

Advertisement

বর্তমানে মোবাইল ফোন বা ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রিয়জনের কাছে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছানো সম্ভব। তবুও এখনো কদর কমেনি বই, গিফট কার্ড কিংবা ফুলের।

বসন্ত বরণে নগরের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের। সকাল ৮টায় নগরের সিআরবির শিরিষতলায় মুক্ত মঞ্চে বেহালা ও ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের বসন্ত বরণের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. মাহবুবুল হক।

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট শিল্পীরা। দুই পর্বের এ আয়োজনে ছিল শিল্পী প্রমা অবন্তীর নৃত্য, দি ভায়োলিনিস্ট চিটাগাংয়ের যন্ত্রসঙ্গীত, রক্তকরবীর সম্মেলক সঙ্গীত।

এদিকে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে জামালখান ডা. এম এ হাশেম চত্বরে মোহন বীণার সুর ছড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নগরের সম্মিলিত বসন্ত উৎসবের। উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য সমাজ বিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।

Advertisement

দিলরুবা খান, দেবাশীষ রুদ্রের উপস্থাপনায় সেখানে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন- রক্তকরবীর শিল্পীরা। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে- সঙ্গীত ভবন, আনন্দধ্বনি, স্বরলিপি, সঙ্গীত পরিষদ, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন, শিল্পী সংসদ ও নটরাজ সঙ্গীত একাডেমি। নৃত্য পরিবেশন করবে- স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ড্যান্স, ঘুঙুর নৃত্যকলা একাডেমি, ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নটরাজ, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ ও সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি।

আবু আজাদ/এফআর/পিআর