দেশজুড়ে

শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে বসে দুপুরের খাবার খান শিক্ষিকা তানিয়া

ঘড়ির কাটায় তখন বেলা সোয়া ১টা। বিদ্যালয়ে মধ্যবিরতির ঘণ্টা বেজে উঠতেই বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ থেকে মাঠের দিকে ছুটে আসে ২৫/৩০ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আর তাদের পেছনে পেছনে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে বড় আকারের একটি টিফিন ক্যারিয়ার হাতে মাঠে আসেন সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আফরোজ। এসেই সবুজ ঘাসের ওপর শিক্ষার্থীদের মাঝখানে বসে পড়েন। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়েই শুরু করেন দুপুরের খাবার।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

শুধু একদিন বা দুদিন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয় মাঠের সবুজ ঘাসে বসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে থাকেন এই শিক্ষিকা। বর্তমানে তার দেখাদেখি সহকারী শিক্ষক মো. ওমর ফারুক, মো. নুরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হোসেনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠের সবুজ ঘাসে বসেই সারেন দুপুরের খাবার।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নসহ ঝরেপড়া রোধ করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে তানিয়া আফরোজ বলেন, আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর দেখলাম টিফিনের পর অনেক শিক্ষার্থীই বাড়ি চলে যায়। আবার অনেকেই বিদ্যালয়ের পাশের দোকান থেকে সিঙ্গারা বা ঝালমুড়ি খায়। এর ফলে অনেকেই লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে, আবার অনেকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। তখনই আমি নিজেই বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এসে ওদের নিয়ে খাওয়ানো শুরু করি। একসময় তাদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতেও উদ্বুদ্ধ করি।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা ছাত্র-শিক্ষক একে-অপরের খাবার ভাগাভাগি করে খাই। এখন এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। পিছিয়ে পড়া এ জনপদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে মায়ের আদর ছড়িয়ে দিতেই আমি ওদের সঙ্গে মাঠে বসেই দুপুরের খাবার খাই। এখন টিফিন হলে কেউ ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি যায় না বরং টিফিন বক্স নিয়ে মাঠে বসে পড়ে।

শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার (৩য় শ্রেণি), মেঘলা আকতার (৩য় শ্রেণি), সুমাইয়া আকতার (৫ম শ্রেণি) ও ইয়াছিন আরাফাত (৪র্থ শ্রেণি) জানায়, তানিয়া ম্যাডাম আমাদের মায়ের মতো আদর করেন। বাড়ি থেকে রান্না করে এনে আমাদের খাওয়ান। টিফিন হলেই আমরা ম্যাডামের সঙ্গে বসে খাই।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বসে শিক্ষকের খাওয়া একটি অসাধারণ বিষয়। বিষয়টি শিক্ষক সমাজের জন্য অবশ্যই অনুকরণীয়। একজন শিক্ষক চাইলে যে একটি বিদ্যালয়ের চিত্র পাল্টে দিতে পারেন, তানিয়া আফরোজ তার অনন্য উদাহরণ।

প্রসঙ্গত, তানিয়া আফরোজ ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেনা কর্মকর্তা স্বামীর চাকরির সুবাদে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন শান্তিপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

Advertisement

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/বিএ