ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন কিংবা রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছিল নানা প্রশ্ন। গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও উঠেপড়ে লেগেছিল অপপ্রচারে। সে জায়গা থেকে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ফায়ার সেফটি নিয়ে অনেক ধরনের কাজের মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে ফায়ার সেফটি এক্সপো।
Advertisement
সপ্তমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-ইফসি-২০২০। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, তাইওয়ান, তুরস্ক, ইউএই, পর্তুগাল, স্পেন, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ ২৫টি দেশের ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ফায়ার সেফটি মেলা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এ মেলা ঘুরতে উপচেপড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।
মেলার ভেতরে স্টলগুলোতে ফায়ার প্রোটেকশন, ফায়ার ডিটেকশন, সিসিটিভি এবং ভিডিও সার্ভিলেন্স, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার এলার্ম, ইস্টিংগুইশার, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমসহ রেসকিউ এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে। মেলায় দেশীয় নানা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশ নিয়েছে আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ব্রাভো ও সেফমেট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
মেলার ব্রাভোর ফায়ার সেফট ডোর স্টলে কথা হয় ডেপুটি ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গার্মেন্টস খাতে ফরেন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (এফটিএ) ইউরোপীয় বায়ারদের একটি সংগঠন। এই এফটিএর দুটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিজিনেস সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ইনিশিয়েটিভ (বিএসসিআই)। সংগঠনটি কর্মচারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করে। বিএসসিআই এর আচরণবিধির ১১টি নীতিমালার মধ্যে ৩ নম্বরেই পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং ১১ নম্বরে রয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ। কারখানা বহুতল হলে সেখানে নিরাপত্তার জন্য ফায়ার এক্সিট ডোর থাকা আবশ্যক। না থাকলে বিদেশি বায়াররা নেগেটিভ হিসেবে নেয়। এই ক্ষেত্রটিতেই আমরা কাজ করছি। সুলভ মূল্যে ব্রাভো বাজারে এনেছে ফায়ার এক্সিট ডোর। এ সংক্রান্ত অন্যান্য সেফটি উপকরণের মধ্যে রয়েছে ডোর ফ্রেম, ডোর লিফ, ডোর হিংসেস, ডোর লক, ফায়ার এক্সিট ডিভাইস বা পেনিক বার।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে বাংলাদেশে পারটেক্স ইউএন সার্টিফাইয়েড ডোর বাজারে আনে। এখন আরএফএলএর ব্রাভোও বাজারে এনেছে। এগুলো আমাদের ইউএস সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। না হলে বিক্রি করা যায় না। বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেও এখন এ ধরনের ফায়ার সেফটি ডোর খুবই কার্যকরী।
অন্যদিকে সেফমেট স্টলে গিয়ে দেখা যায়, প্রদর্শনীর জন্য স্টলে সাজানো হয়েছে, ফায়ার হাইড্রেন্ট, পাউডার এক্সটিংগুইশার, বল এক্সটিংগুইশার। ফায়ার নোটিফিকেশন এলার্ম, ফায়ার পাম্প ও ফায়ার হুজ পাইপ।
আরএফএলএর রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেটের (আরএমআইএল-২) ম্যানেজার (সেফমেট) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হঠাৎ করেই কোনো ভবনে যদি আগুন লাগে কিংবা ধোঁয়া দেখা দেয়, ফায়ার সেফটির উপকরণগুলো থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আগুন লাগা কিংবা ধোঁয়া সৃষ্টির পর ফায়ার নোটিফিকেশন এলার্ম মেশিনের সেন্স কাজ করা মাত্রই কাট আউট সিস্টেমে মেশিনের একটি কাট উঠে যাবে এবং সেকেন্ডের মধ্যে এলার্ম বেজে উঠবে। এতে দ্রুতেই সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ড থেকে সুরক্ষিত থাকতে বাড়িতে বা অফিসে খুবই কার্যকর সেফমেট ফায়ার এক্সটিংগুইশার।
মেলায় মোট স্টল রয়েছে ৭৫টি। ইফসির ৭ম আসরে বরাবরের মতো কো-পার্টনার বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। সহযোগী পার্টনার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), এনএফপিএ-ইউএসএ, বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বেসিস, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি-বিসিএস, ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট বিজনেস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। শুধুমাত্র নাম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কোনো প্রকার ফি ছাড়াই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। মেলা চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জেইউ/এমএসএইচ/পিআর