আন্তর্জাতিক

করোনায় আক্রান্ত কমছে

নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কমে আসায় আগামী এপ্রিলের মধ্যে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হতে পারে বলে আশা করছেন চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। জানুয়ারির পর থেকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন মঙ্গলবার; যে কারণে তাদের এই আশায় স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে।

Advertisement

চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ফুরিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখতে পেলেও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এর বিস্তারের ব্যাপারে এখনও শঙ্কিত। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন এক হাজার ১১৩ জন। এর বাইরে ফিলিপাইন এবং হংকংয়ে একজন করে মারা গেছেন।

মঙ্গলবার চীনের প্রাদুর্ভাব বিষয়ক শীর্ষ মেডিকেল উপদেষ্টা চিকিৎসক ঝং নাশান বলেছেন, কয়েকটি প্রদেশে নতুন করে আক্রান্ত কমে এসেছে এবং চলতি মাসে এই মহামারিটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছেন তিনি। তবে আশার বাণীও শুনিয়েছেন চীনা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমি আশা করছি এই প্রাদুর্ভাব অথবা এই ঘটনা আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য বলছে, চীনে এখন পর্যন্ত নতুন এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৪ হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার আক্রান্ত হওয়া ২ হাজার ১৫ জনও রয়েছেন; যা ৩০ জানুয়ারির পর একদিনে সর্বনিম্ন আক্রান্ত। মঙ্গলবার চীনের মূল ভূখণ্ডে করোনায় মারা গেছেন ৯৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ১১৩ জনে পৌঁছেছে

Advertisement

দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানালেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শনাক্তকৃত নতুন এই করোনাভাইরাস বিশ্বের জন্য সন্ত্রাসবাদের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি

ডব্লিউএইচও'র প্রধান টেড্রোস অ্যাধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, বিশ্বকে অবশ্যই জাগ্রত হতে হবে এবং এই ভাইরাসকে এক নম্বর শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। চীনের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে আরও কমপক্ষে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চীনা চিকিৎসক ঝংয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারে জানতে চাইলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মুরফি এবিসিকে বলেন, আমি মনে করি, এটি এখনই বলাটা আগাম হয়ে যাবে। যেকোনও ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার আগে সামনের সপ্তাহগুলোতে কি ঘটতে পারে; সেদিকে আমাদের নিবিড় মনযোগ দেয়া দরকার। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চীনের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলীয় এই চিকিৎসক।

চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙ্গর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরীতে। ৩ হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এই প্রমোদতরীতে বুধবার পর্যন্ত ১৭৫ জনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

Advertisement

করোনাকে সন্ত্রাসী হিসেবে তুলনা করে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এটি এমন এক ধরনের লড়াই যেখানে গানপাউডার ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে অবশ্যই জিততে হবে।

এই মহামারি চীনের সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং সক্ষমতার বড় পরীক্ষা বলে সতর্ক করে দিয়েছে সিনহুয়া। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে দেশটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সিনহুয়া বলছে, এটা আমাদের জেগে ওঠার ডাক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুইজারল্যান্ডে এক বৈঠকে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাসের নামকরণ করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯ (Covid-19) নামে। করোনার প্রথম দুটি অক্ষর সিও (CO), ভাইরাসের প্রথম দুই অক্ষর ভিআই (VI), ডিজিজের প্রথম অক্ষর ডি (D) এবং ২০১৯ সালে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ায় ১৯ যোগ করে কোভিড-১৯ নামকরণ করা হয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স, এবিসি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

এসআইএস/এমকেএইচ