বাংলাদেশকে এক সময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হত। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন আর নেই। মাঝখানে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার এক চেষ্টা হয়েছিল। বিশেষ করে সরকার বন্ধ পাটকল চালুসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিল পাটখাতের উন্নয়নে। কিন্তু সেটিও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আবারও শুরু হয়েছে পাট খাতের দুর্দিন । ফলে পাট চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এবং পাটজাত পণ্যের সঙ্গে যেসব মানুষজন জড়িত তারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আবারও উদ্যোগী হতে হবে। দেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে ঐতিহ্যময় গৌরব। সরকার ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন ( ২০১০) করলেও এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এই আইনে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যে ৭৫ শতাংশ পাট আছে, এমন উপাদান দিয়ে তৈরি মোড়ক ব্যবহারের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও দেশে পাটের ব্যাগের ব্যবহার না বেড়ে বরং কমে গেছে। পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে পাটজাত পণ্যের প্রতি এ অবহেলা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান সরকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করে বলেছে, ম্যান্ডেটরি জুট প্যাকেজিং আইন-২০১০ বাস্তবায়নে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য পাটের ব্যাগে প্যাকেজিং করা বাধ্যতামূলক করা হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকেজিংয়ের জন্য পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা নিশ্চিত করবে। তিনি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী অথবা স্টেক হোল্ডারদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।শুধু হুঁশিয়ারি দিলেই হবে না, সেটি যাতে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে পাট ব্যবসায়ী ও পাটকলের মালিকদের অবস্থাও সঙ্গীন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে হলে বহুমুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হবে। পাটকলগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে জুটমিলগুলোকে। বড় পাটকলের চেয়ে পাটজাত পণ্য তৈরি করতে পারে এমন ছোট ছোট শিল্পের সম্ভাবনা বেশি। কাজেই এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হলে কৃষির ওপর ভর করেই তা করতে হবে। আর সেজন্য অন্যতম কৃষিপণ্য পাটের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে দেশপ্রেমেরও উন্মেষ ঘটাতে হবে। পাটের সুদিন ফিরে আসলে এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে যুগোপযোগী এবং বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন- আমাদের প্রত্যাশা এমনটিই। এইচআর/এমএস
Advertisement