করোনাভাইরাসের ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনও আসেনি, জানা যায়নি সংক্রমণের উৎসও। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। একদিনের মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনকে। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮১৩ জন।
Advertisement
সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ৪০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা অনেকে চীন ভ্রমণ করে দেশে এসেছেন। এ ছাড়া তিনজন রোগীর কেউ চায়না ভ্রমণ করেনি এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানা গেছে।
সিঙ্গাপুর সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তিনটি রিস্ক লেভেল ঘোষণা করেছে। প্রথম (ইয়োলো) মানে আক্রান্ত রোগীরা চাইনিজ নাগরিক কিংবা সর্বশেষ চীন ভ্রমণ করে এসেছে।
দ্বিতীয় রিস্ক লেভেল (অরেঞ্জ) মানে কিছু কিছু স্থানীয় লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাদের কেউ চীন ভ্রমণ করেনি কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
Advertisement
সর্বশেষ রিস্ক লেভেল রেড (লাল) অর্থাৎ সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেই রিস্ক লেভেল রেড ঘোষণা করা হবে। তখন সমস্ত অফিস, স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হবে।
গতকাল রিক্স লেভেল অরেঞ্জ ঘোষণা করার সাথে সাথে সিঙ্গাপুরে স্থানীয় এমনকি প্রবাসীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দোকানগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার হিড়িক পড়ে। মানুষ যখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন তাদের মস্তিষ্ক কাজ করে না। আর আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই, দেশ নেই।
আজ থেকে প্রতিটি ডরমিটরি থেকে বের হওয়ার সময় এবং কাজ শেষে ডরমিটরিতে ফেরার পর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। কারো শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এমনকি অফিসে প্রবেশ করার সময়ও শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো অভিবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে সিঙ্গাপুরেও করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
তবে প্রবাসীদের আতঙ্কিত হবার প্রয়োজন নেই। আর ফেসবুকের গুজবেও কান না দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে সিঙ্গাপুর মিনিস্টার অব হেলথ ওয়েবসাইট থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। তবে এ তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের। সম্প্রতি জার্মানির হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি ও রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন; এদের মধ্যে ৬৪ জনই একটি প্রমোদতরীর। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, গত ডিসেম্বরে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৬৩ জন। এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৮১৩ জন এবং সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ২ হাজার ১৫২ জন।
এদিকে চীনে চেন কুইউশি নামের এক সাংবাদিক করোনাভাইরাস উপদ্রুত উহান শহরের করুণ দৃশ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পর থেকে নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে চেনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।
এমআরএম/এমকেএইচ