অনেকদিনের পুরনো চিত্রনাট্যে পরিবর্তন এসেছে। একই গল্প, একই সংলাপ শুনতে শুনতে যখন দর্শকদের কাছে গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেছে, তারা যখন ক্লান্ত হয়ে কেউ নাটক পাড়ায় যাচ্ছিল না তখনই শোনা গেল নতুন গল্প নিয়ে এসেছে একটি প্রযোজনা সংস্থা। এখন যদি দর্শকের মন পাওয়া যায়! পুরনো গল্পের স্থান কাল পাত্র অবশ্য আলাদা হলেও কাহিনী কিন্তু একই রকমের। তবে সেই কাহিনীর নামে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন এসেছে। এবার অবশ্য কাহিনীতেও কিছু সংশোধন দেখা যাচ্ছে। সিনেমা বা নাটকে দেখা যায় ভিলেন ও তার সঙ্গীদের হাতে একে ৪৭, স্টেনগান, মেশিনগানসহ নানা ধরনের ভারি অস্ত্র। মাঝে মধ্যে গ্রেনেডও থাকে তাদের হাতে। তারা নায়ক বা নায়কপক্ষের লোকজনের ওপর অনবরত গুলি চালিয়ে যায় কিন্তু কারো গায়ে গুলি লাগে না। ওদিকে নায়ক যদি পুলিশ অফিসার হয় তার হাতে একটি ৩৮ বোরের রিভলবার বা অনেক সময় খালিহাতে লড়াই করে যান। এক পর্যায়ে নায়কের গুলি শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ভিলেন পক্ষের গুলিবর্ষণ চলতেই থাকে। ওই লড়াইয়েও শেষ পর্যন্ত নায়কের জয় হয়। ভারি অস্ত্র ফেলে ভিলেন পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন বা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, নয়তো আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না বলে পুলিশ এসে তাকে আটক করে। এই চিত্র আমাদের সিনেমার অতি কমন। আমাদের প্রযোজনা বিভাগগুলোর চিত্রনাট্যগুলো সাধারণত এমন হয়-..দিবাগত রাত ২ টায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আমগাছিয়া খাল এলাকায় বনদস্যু আক্কাস তার সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় কলাকুশলীরা সেখানে শুটিং করতে যায়। এসময় বনদস্যুরা কলাকুশলীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। জবাবে কলাকুশলীরাও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। একপর্যায়ে দস্যুরা গুলি ছোঁড়া বন্ধ করে পিছু হটে সুন্দরবনের গহীনে পালিয়ে যায়। পরে কলাকুশলীরা ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে এক বনদস্যুর লাশ ও বনদস্যুদের ব্যবহৃত দেশি-বিদেশি ৫টি আগ্নেয়ান্ত্র ও ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে...।সিনেমার চিত্রনাট্যের সঙ্গে প্রযোজনা বিভাগগুলোর চিত্রনাট্যের যথেষ্ট মিল আছে। পার্থক্য শুধু নায়কের জায়গায় ভিলেন হবে। কারণ এখানে ভারি অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছিঁচকে চোর মাস্তান। ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া খুচরা মাস্তান কখনোই জয়ী হতে পারে না। প্রতিবারই মৃত্যু নিশ্চিত জেনে খুচরা মাস্তানরা প্রশিক্ষিত বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে। তাদের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। গত দেড়যুগে তিন সহস্রাধিক এমন চিত্রনাট্য হয়েছে। নির্বাহী প্রযোজক যথারীতি বয়ান দেন “যা কিছু ঘটছে আইনের বিধি-বিধান মেনেই হচ্ছে। আইনের বিধিবিধান না মেনে কেউ কিছু করলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে।” তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে যেখানে যাওয়ার কথা সেই সংস্থার যিনি সর্দার তিনিও বলেছেন, প্রতিদিন একই গল্প শুনতে কারও ভালো লাগে না। গল্পের পরিবর্তন প্রয়োজন। একটি প্রযোজনা সংস্থাকে ওই সর্দার বললেন টার্গেটের যাতে পায়ে লাগে, এ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। দপ্তর নেই এমন একজন উজির মাঝে মধ্য্যই বলেন ওইসব নাটক আর কেউ বিশ্বাস করে না। এবারই প্রথম দেখলাম ওই চিত্রনাট্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এবার প্রযোজনা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে আগের দিন আটক নিষিদ্ধ সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে অভিযানে যাওয়া হয়। অভিযানস্থলেই এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে ভোরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরতরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিস্ফোরণে তিন কলাকুশলীও আহত হয়েছেন। প্রযোজনা বিভাগ আরো জানায়, ঘটনাস্থলের পাশে একটি খেঁজুর গাছের নিচে গ্রেনেড রাখা ছিল। টিভির সংবাদ পাঠক বা পাঠিকারা তোতাপাখির মতো আওড়িয়ে যাবেন ওই নাটকের কাহিনী। দর্শকেরা অনেকদিন পর দেখবেন নাটকের চিত্রনাট্যের কিছুটা সংশোধন। গল্পটা বলা হচ্ছে একটু ভিন্নভাবে। পরিবর্তন শুধু গল্পেই নয়, পাত্র বাছাইয়েও। তবে এবারের পাত্র এমন একজন যারা কখনোই চিত্রনাট্যে ঠাঁই পেতেন না। দর্শকদের একটা বড় অংশ অবশ্য ওই ধরনের পাত্রকে আরো বেশি করে চিত্রনাট্যে দেখতে চায়। কিন্তু কখনোই প্রযোজক তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন না। আজ থেকে এক যুগেরও বেশি আগে এই দেশে ৫৭ জন দর্শক একটি প্রযোজনা সংস্থার তত্ত্বাবধানে হৃদয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এরপর হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তারপর থেকেই গল্পের আমূল পরিবর্তন। অতিসম্প্রতি আবার ওই হৃদয়ে আক্রমণের শিকার হওয়ার খবর শিরোনাম হয়েছে। আর, ওদিকে সিনেমার শেষ দৃশ্যের ন্যায় শুরু হলো চিত্রনাট্য রচনায়ও পরিবর্তন। এইসব চিত্রনাট্য রচনার আগেও ওইরকম কয়েকশ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এদেশে। সাধারণ মানুষ ওইসব নাটক দেখে আর হাততালিও দেয় না, আবার কান্নায়ও ভেঙ্গে পড়ে না। এইচআর/এমএস
Advertisement