আন্তর্জাতিক

জবাব চান চীনের সেই ‘হিরো’ চিকিৎসকের মা

করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী রূপে হাজির হওয়ার আগে চীনের উহানের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আগে তার এ সতর্কবার্তাকে ভালোভাবে নেয়নি চীন সরকার। পরে তাকে এ ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বাধ্য করা হয়। নিজে এই ভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিলেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আর বাঁচতে পারেননি; করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই চিকিৎসক।

Advertisement

এই ভাইরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়ার কারণে উহান পুলিশ লি ওয়েনলিয়াংয়ের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছিল; তার নিন্দা জানিয়েছেন এই চিকিৎসকের মা। পিয়ার ভিডিওতে প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, লির মা বলছেন, ‘আমার ছেলে এই ভাইরাসের ব্যাপারে আগে সতর্ক করে দেয়ার কারণে আমাদের পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে সেখানে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় লিকে। ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে লি সতর্ক করে দিলেও সে ব্যাপারে কোনো তদন্ত না করেই এ ধরনের হেনস্তা করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত না করেই মধ্যরাতে উহান পুলিশ স্টেশনে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা যদি এর সঠিক ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে আমরা শান্ত হবো না।

গত ৩০ ডিসেম্বর চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ব্যক্তিগত উইচ্যাট গ্রুপে বন্ধুদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘উহানের হাসপাতালে সার্স ভাইরাসে সাতজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি অজ্ঞাত এক করোনাভাইরাস।’

Advertisement

উইচ্যাটের ব্যক্তিগত সেই গ্রুপে চিকিৎসক বন্ধুদের সঙ্গে লির এ আলোচনার একটি স্ক্রিনশট ফাঁস হয়। পরে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে চিকিৎসক লিকে উহানের একটি পুলিশ স্টেশনে মধ্যরাতে ডেকে তীব্র ভর্ৎসনা ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যান লি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানো এই চিকিৎসককে চীনারা এখন বীরের খেতাবে ভূষিত করেছেন। ভাইরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়ার ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে লির মুখ বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন চীনা নাগরিকরা।

অনেকেই বলছেন, করোনার উপস্থিতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ার জেরে লির ওপর নাখোশ ছিল চীন সরকার। এ কারণে তার চিকিৎসায় গাফিলতি হয়ে থাকতে পারে। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভি বলছে, লির মৃত্যুতে চীনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। লি ওয়েনলিয়াংয়ের প্রাণহানির ঘটনায় জনগণ যেসব প্রশ্ন তুলেছেন সে ব্যাপারে পূর্ণ তদন্ত করতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে উহানে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।

লির মা বলেন, এটা যদি সম্ভব হতো যে, লি মেডিকেলের সামনের সারিতে বসে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা এখনও দিচ্ছে; তাহলে আমরা তার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতাম। ছোটবেলা থেকেই লি অত্যন্ত মানবিক এবং নরম হৃদয়ের অধিকারী ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যরা যখন সপ্তাহে একবার রাতে ডিউটি করতো; লি তখন সপ্তাহে দু'বার করতো।

Advertisement

করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনায় দেশটির নাগরিকরা যেভাবে লির প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন জানান; সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী ফু জুয়েজি। নিহত লির পরিবারে পাঁচ বছরের এক সন্তান রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী ফু আগামী জুনে দ্বিতীয় সন্তানের মা হওয়ার অপেক্ষা করছেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, গত ডিসেম্বরে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৬৩ জন। এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৮১৩ জন এবং সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ২ হাজার ১৫২ জন। এদিকে চীনে চেন কুইউশি নামের এক সাংবাদিক করোনাভাইরাস উপদ্রুত উহান শহরের করুণ দৃশ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পর থেকে নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে চেনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।

সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স।

এসআইএস/জেআইএম