প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবা পড়ল এবার দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাই’র ওপর। করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে যন্ত্রাংশ না আসায় দক্ষিণ কোরিয়ার উলসানে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়ির এই কারখানা তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার কোম্পানিটি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে ছুটিকালীন তাদের আংশিক বেতন দেবে হুন্দাই।
ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার উলসানে বন্ধ করে দেয়া গাড়ির কারখানা থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখ গাড়ি তৈরি করা হয়। তবে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভের পর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে চীন। এতে করে কারখানাটির চীন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানিতে ভাটা পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুন্দাইয়ের গাড়ি কারখানা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি এমন এক ঘটনা যার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বে। তারা আরও বলেছেন, কারখানা বন্ধ থাকার কারণে হুন্দাইয়ের যে আর্থিক লোকসান হবে তা রীতিমতো বিস্ময়কর হবে।
Advertisement
এক হিসাবে দেখা গেছে, যদি পাঁচ দিনও কারখানাটি বন্ধ থাকে, তাহলে এর জন্য ৬০০ বিলিয়ন ওন (দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা) বা ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার লোকসান গুনতে হবে হুন্দাইকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক চিওং ইন-কিও। তিনি বলেছেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের যন্ত্রাংশ ও উপাদানের জন্য চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যদি কখনও একটি যন্ত্রাংশও না পাওয়া যায়, তাহলে এ রকমই সমস্যা দেখা দেবে। এই অবস্থায় আপনার কিছুই করার নেই।’
এর আগে, চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দেশটিতে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে হুন্দাই, টেসলা, ফোর্ড, নিসান, হোন্ডাসহ অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন বন্ধ শুধু চীনে। এর বাইরে বাকি সব কারখানাই পুরোদমে চালু রয়েছে।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। এর মধ্যে শুধুমাত্র হুবেই প্রদেশে ৭৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
Advertisement
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৮০০ জন। এর মধ্যে চীনের হুবেই প্রদেশে ২৭ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ২০ হাজারেরও বেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি। আর তাদের মধ্যে ১১৫৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
করোনাভাইরাস মৃতের সংখ্যা ২০০২ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসকেও ছাড়িয়ে গেছে। সেসময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। আর এতে আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৯৮ জন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
এসআর/পিআর