দেশে পর পর দুজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার পর দেশ বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়া ঘটনার পরপরই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) তাৎক্ষণিক দায় স্বীকার করায় সে ঝড় যেন আরো বেগবান হয়ে উঠে। ফলে সমালোচনায় পড়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা। তবে অনুসন্ধানের পর দেশে আদৌ আইএসের অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়েও ব্যাপক সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সন্দেহ প্রকাশ করছে। মঙ্গলবার ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক হত্যার পেছনে কারা জড়িত শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক হত্যার পর তাৎক্ষণিভাবে আইএসের দায় স্বীকার করা নিয়ে সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দেশটিতে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেছেন।গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যারা ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চায় না, মূলত তারাই এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। ইতালি ও জাপানের নাগরিক খুনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বলে রোববার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।এর আগে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় ইতালির নাগরিক সিজারে তাবেলাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ৩ অক্টোবর জাপানের নাগরিক কুনিও হোসি দেশের উত্তরাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। এ হত্যার পর জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা নাকচ করে বলেন, দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই।ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন নেতা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দ্য হিন্দুকে জানান, দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের দুইজন মানবতাবিরোধীর চূড়ান্ত রায়কে সামনে রেখে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে হিন্দু জানায়, বাংলাদেশে আইএসের সক্রিয় থাকার কোনো তথ্য নেই।এদিকে, ভারতের আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের দেশের গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় দেশটির রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী জড়িত থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন। বিদেশি নাগরিকদের হত্যায় দলটির হাত রয়েছে। ঘাতকরা এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার না হওয়ার অভিযোগে এনে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।ভারতের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, নিকট ভবিষ্যতে জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টে দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানি চলছে। আর এই সময়েই বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই করা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আইএস জঙ্গিরা বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ চরমপন্থীদের দিয়ে হামলা চালিয়ে তা আইএস করেছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব এসব ঘটনায় অবিলম্বে নিন্দা জানাবে। এবং এসব ঘটনার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সেটি পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।এসআইএস/এএইচ/পিআর
Advertisement