বিশেষ প্রতিবেদন

ধার্য হয়েছে বৈঠক, ‘শূন্য-ব্যয়ে’ নিয়োগ প্রস্তাব এখনো পায়নি ঢাকা

বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যকার স্থগিত হয়ে যাওয়া বৈঠক অবশেষে হতে চলেছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ বৈঠক ধার্য করা হয়েছে। তবে ‘শূন্য-খরচে’ মালয়েশিয়া কর্মী নিতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ালেও এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এখনো পায়নি ঢাকা। তাই শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়াসহ যাবতীয় বিষয়াদির সিদ্ধান্ত ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisement

বৈঠকটি ধার্য হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার স্থগিত হওয়া যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকটি আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা মালয়েশিয়াকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা সে চিঠির উত্তরে এই তারিখ জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তারাই তো বারবার দেরি করছে। আশা করছি এই বৈঠকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব দুদেশ।’

এক বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ রেখে ফের নিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া। ফলে বাংলাদেশের বিরাট এ শ্রমবাজার আবারও উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘শূন্য’ খরচের কথা।

Advertisement

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান দেশটির সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শূন্য-ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের জন্য এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি নেপালের সঙ্গে করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে

চুক্তির আওতায় কর্মী নিয়োগের সার্ভিস চার্জ, যাওয়া-আসার প্লেন ভাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুরক্ষা স্ক্রিনিং ও শুল্ক চার্জ নিয়োগকর্তারাই দেবেন বলে জানান কুলাসেগারান।

তবে ‘শূন্য-ব্যয়ে’ নিয়োগের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘দেখুন, শূন্য খরচে কর্মী পাঠাতে আমরাও চাই্। এমনটি করা গেলে আমরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হব। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া শূনয-খরচে কর্মী নিতে চায়, এই বিষয়ে আমরা শুধু গণমাধ্যমেই জেনেছি। গণমাধ্যমে বলা এক বিষয় আর ম্যাকানিজম কীভাবে হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া অন্য বিষয়।’

Advertisement

‘আমরা এ বিষয়ে এখনো মালয়েশিয়ার কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পাইনি। যদি পাই অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’

মালয়েশিয়ায় কর্মরত শ্রমিক

সামনের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকে মালয়েশিয়া এই প্রস্তাব দেয় কি-না, সেটিও দেখার বিষয় বলে জানান মন্ত্রী।

ইমরান আহমদ আরও জানান, এ শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি যেসব কারণে বারবার ঝুলে যাচ্ছিল সেসব বিষয়ে দুদেশ অনেকটা একমত হয়েছে। এবারের বৈঠকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার চাওয়াকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শ্রমবাজার। ২০১২ সালে দু’দেশের মধ্যে জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর চুক্তি হলেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয় সেই প্রক্রিয়া। এরপর ২০১৬ সালে এসে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে কর্মী নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ঢাকা ও কুয়ালালামপুর।

মেগাসিটি কুয়ালালামপুর, অজস্র শ্রমিকের স্বপ্ন গড়ার নগরী

এ পদ্ধতিতে পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে কর্মী পাঠানো হচ্ছিল। তবে এ চুক্তির আওতায় মাত্র ১০টি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এসব এজেন্সির কাছ থেকে মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানি কর্মী নিতে পারত।

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে সরকারি খরচ ৪০ হাজারের কম নির্ধারিত হলেও জনপ্রতি কর্মীর কাছ থেকে চার লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা করেও নেয় সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এ চক্রের তৎপরতার কারণে দু’দেশের নেতৃত্ব পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশিকর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।

বাজারটি পুনরায় উন্মুক্ত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে ঢাকা। এর অংশ হিসেবে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। ওই সফর শেষে দুদেশের যৌথ কারিগরি কমিটির চতুর্থ বৈঠক ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সে বৈঠক স্থগিত করে মালয়েশিয়া। ওই স্থগিত বৈঠকের নতুন দিন ধার্য হওয়ায় আশার আলো দেখছে ঢাকা।

জেপি/এইচএ/জেআইএম