চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। হাজার হাজার মানুষকে আক্রান্ত করেছে এ ভাইরাস। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬৪। সীমান্ত বন্ধ হয়ে চীনের একাংশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। কিন্তু যে ভাইরাসের কারণে এতো আতঙ্ক আসলে সেই ভাইরাসটির কোনো আনুষ্ঠানিক নাম নেই।
Advertisement
ভাইরাসের নামকরণের দায়িত্বে থাকা ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাসেস (আইসিটিভি)’ এখনো এর যথাযথ কোনো নাম দিতে পারেনি। তবে ভাইরাসটির সঠিক নাম দিতে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইরাসটির একটি যথাযথ নাম দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।
করোনাভাইরাস, চায়না ভাইরাসসহ বিভিন্ন নামে নতুন এ ভাইরাসটিকে অনেকে ডাকলেও আসলে এটি এর সঠিক নাম নয়। বরং ভাইরাসের যে গ্রুপে এর অবস্থান সেটির নাম করোনাভাইরাস।
২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান শহরে প্রথম দেখা পাওয়া নতুন এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে বিজ্ঞানীরা নোভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে ডাকছেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখলে এর শরীরে মুকুটের মতো স্পাইক বা কাটা থাকে বলে সাময়িকভাবে এদের করোনাভাইরাস নামকরণ করা হয়।
Advertisement
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) একে প্রাথমিকভাবে ‘২০১৯-এনকভ’ নামে ডাকার সুপারিশ করে। ২০১৯ দিয়ে এ ভাইরাসটি শনাক্তের সাল, ‘এন’ দিয়ে নোভেল বা নিউ বা নতুন এবং ‘কভ’ দিয়ে করোনাভাইরাস বোঝায়। তবে এ নামটি তারা চূড়ান্ত করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, ভাইরাসের নাম হবে ছোট কিন্তু বর্ণনামূলক এবং উচ্চারণে সহজ। যেমন সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামকরণ করা হয়েছিল।
আইসিটিভির ১০ সদস্যের গবেষক দলের সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বেঞ্জামিন নিউম্যান বলেন, ‘অন্য সব নামের তুলনায় নতুন ভাইরাসের নামের উচ্চারণ সহজ হতে হবে।’
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আইসিটিভির ১০ সদস্যের এই দলটি নাম নির্ধারণের জন্য আলোচনা শুরু করে। দুই দিনের আলোচনা শেষে তারা একটি নামের বিষয়ে একমত হন। এখন নামটি প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে জমা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় কয়েক দিনের মধ্যেই এটি ঘোষণা করা হবে। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করা ছাড়াও আইসিটিভি আশা করছে এটির প্রতিষেধক আবিষ্কারে এর নামকরণ গবেষকদের সময় বাঁচাবে এবং ঝামেলা কমাবে।
Advertisement
হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সহকারী অধ্যাপক এবং জ্যেষ্ঠ স্কলার ক্রিস্টাল ওয়াটসন বলেন, ‘নতুন কোনো ভাইরাসের নামকরণ সাধারণত কিছুটা দেরিতে হয়। জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাবের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নামকরণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, বর্তমানে এটির যে নাম ‘২০১৯ এনকভ’ তা উচ্চারণ সহজ নয় বলে জনগণ এবং মিডিয়া এর ভিন্ন নাম ব্যবহার করছে। আনুষ্ঠানিক নাম না থাকায় অনেকে একে চায়না ভাইরাস বলে ডাকতে শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরে তা পরিবর্তন করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। যা একটি নির্দিষ্ট জনগণের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।’
এ ভাইরাসটির সঠিক নামকরণ না হলে বিতর্কে পড়তে পারে ভাইরাসের নামকরণের দায়িত্বে থাকা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাসেস (আইসিটিভি) নামের প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও তারা বিতর্কে পড়েছে।
২০০৯ সালে এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছিল ‘সোয়াইন ফ্লু’। যার প্রভাবে মিশর তাদের সব শুকর হত্যা করেছিল। যদিও ভাইরাসটি শুকরের মাধ্যমে নয় বরং মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়।
এজন্য আনুষ্ঠানিক নামও অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে। ২০১৫ সালে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামেরও সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ‘কিছু কিছু রোগের নামে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম বা নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নেতিবাচকতা উস্কে দেয়। যার প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে। আর অনেক সময় এর প্রভাবে পশু-পাখিদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
এসব কারণে নতুন করোনাভাইরাসের নামকরণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত:•ভৌগলিক অবস্থান•মানুষের নাম•জীবজন্তুর নাম বা খাদ্যদ্রব্যের নাম•নির্দিষ্ট কোন সংস্কৃতি বা শিল্পের উদ্ধৃতি
সূত্র বিবিসি বাংলা।
এমএফ/জেআইএম