দেশজুড়ে

পোশাক শ্রমিক হত্যা : ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শিশু কন্যার ভরণপোষণের টাকা দেয়ার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রুমা আক্তার (২৪) নামে এক পোশাক কর্মীকে কোকের সঙ্গে অ্যাসিড খাইয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার  নিহতের মা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক কেএম রাশেদুজ্জামান রাজা ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। নিহত রুমা ময়মনসিংহ জেলার চরপাড়া গ্রামের হারেজ মিয়ার মেয়ে।বাদী পক্ষের আইনজীবী সাব্বির আহম্মেদ জাগো নিউজকে জানান, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় মিয়াজ উদ্দিন কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে রুমা স্থানীয় রূপসী গার্মেন্টে ও তার মা রিজিয়া বেগম বিভিন্ন লোকজনের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। গার্মেন্টে কাজ করার সময় একই থানার কায়েমপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৩২) তার প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রেম করে ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর রুমাকে বিয়ে করে। পরে তাকে আলাদা একটি ফ্লাটে ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। বিয়ের পর রুমার গর্ভে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স দেড় বছর। পরে হুমায়ুন কবিরের আরো কয়েকজন স্ত্রী ও সন্তানদের কথা জানতে পারে রুমা। এতে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে রুমার মনোমানিল্য হয়। এক পর্যায়ে রুমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে হুমায়ুন কবির। এ নিয়ে প্রায় সময় রুমাকে মারপিট করতো হুমায়ুন কবির।এতে ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন রুমা। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেন। পরে হুমায়ুন কবিরকে তালাক দিয়ে ও শিশু কন্যার ভরণপোষণ প্রদানের শর্তে জামিনে বের করে ওই মামলা নিষ্পত্তি করেন। মামলা নিষ্পত্তির পর হুমায়ুন কবির শিশু কন্যার ভরণপোষণ না দিয়ে উল্টো ফতুল্লা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি দেয় আর নয়তো হত্যা করে লাশ গুম করা হবে। তার হুমকিতে ভয় না পেয়ে গার্মেন্টে কাজ করতে থাকে রুমা।চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল রাতে শিশু কন্যার ভরণপোষণ দেয়ার কথা বলে হুমায়ুন কবির তার বাসায় ডেকে নিয়ে রুমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে ২২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ হুমায়ুনকে আবার গ্রেফতার করলে ১ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। পরে রুমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। এদিকে, মামলা তুলে না নেয়ায় কৌশলে হুমায়ুন তার বন্ধু মতিউর রহমান মতিকে দিয়ে ভরণ পোষণের টাকা দেয়ার কথা বলে রুমাকে বাসা থেকে ডেকে এনে ফতুল্লার শিবু মার্কেট কুতুবআইল স্কুলের সামনে একটি গাছের নিচে নিয়ে যায়। সেখানে হুমায়ুন কবিরের প্রথম স্ত্রী শাহীনুর বেগম কোকের (কোমল পানীয়) সঙ্গে অ্যাসিড মিশিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রুমার যাওয়ার পর তাকে ওই অ্যাসিড মেশানো কোক খাওয়ার জন্য বলেন। রুমা তা খেতে না চাইলে হুমায়ুন কবির ও শাহীনুর পর পর কয়েকবার রুমার মুখে এবং শারীরের বিভিন্ন স্থানে এসিড ছুঁড়ে মারে। এ সময় রুমা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটে পড়লে হুমায়ুন, শাহীনুর ও মতি জোড় করে অ্যাসিড মেশানো কোক খাইয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রুমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় রুমা তার মা রিজিয়া বেগমকে ঘটনার বিস্তারিত জানান। এরপর ডাক্তারের কাছে নেয়ার সময় রুমা মারা যায়। রুমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হুমায়ুন কবির তার লোকজন নিয়ে এসে দ্রুত লাশ নিয়ে স্থানীয় পিঠালীপুল কবরস্থানে দাফন করেন। পরে রুমার মা শিশু কনিকাকে নিয়ে অন্যত্রে পালিয়ে গিয়ে মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেন।শাহাদাৎ হোসেন/এসএস/পিআর

Advertisement