করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়ছে বিশ্ববাজারেও। প্রতিদিনই কমছে তেলের দাম, দরপতন চলছে এশিয়ার শেয়ারবাজারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান চীনে তাদের কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। এবার ভাইরাস সংকটের প্রভাবে দক্ষিণ কোরিয়াতেও উৎপাদন বন্ধ করতে হচ্ছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাইকে।
Advertisement
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অবরুদ্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি শহর। সেখানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, ভ্রমণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে হুন্দাইয়ের যন্ত্রাংশ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে।
দেশটিতে হুন্দাইয়ের সাতটি কারখানা রয়েছে। তাদের বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে এসব কারখানা থেকে। সেখানে নির্মিত গাড়ি পাঠানো হয় যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে কিছু কিছু যন্ত্রাংশের জন্য অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল হুন্দাই।
২০১৮ সালে দেশটি থেকে প্রায় ১৪৭ কোটি ডলারের যন্ত্রাংশ আমদানি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৬ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এসব যন্ত্রাংশ আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। একারণে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় হুন্দাইয়ের সব কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে ১১ বা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আংশিকভাবে কিছু কারখানা চালু হতে পারে। যদিও এর পুরোটাই নির্ভর করছে যন্ত্রাংশ সরবরাহের ওপর।
Advertisement
এর আগে, চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দেশটিতে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে হুন্দাই, টেসলা, ফোর্ড, নিসান, হোন্ডাসহ অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন বন্ধ শুধু চীনে। এর বাইরে বাকি সব কারখানাই পুরোদমে চালু রয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার। এদিন প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ জন। ফলে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। গতকাল চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৪ হাজার ৩২৪ জন।
চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত দুইজন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে, গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।
জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রমোদতরীতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এই ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ২৭৩ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা মাত্র ৩১টি ফলাফলের মধ্যে। প্রমোদতরীটিতে মোট যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৭শ।
Advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪টি দেশে ১৭৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স
কেএএ/টিটিএন/পিআর