যত সময় যাচ্ছে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। এক সমীক্ষা বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশই পুরুষ। অপরদিকে, এ পর্যন্ত যতজন এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়সই ৬০ বা তার বেশি।
Advertisement
এদিকে, করোনাভাইরাসে একদিনেই আরও ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৪ হাজার ৩২৪ জন।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কর্মকর্তা জিয়াও ইয়াহুই জানান, মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ। এক হিসেব অনুযায়ী দুই-তৃতীয়াংশই পুরুষ। আবার যতজন মারা গেছে, তার মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়সই ৬০ এর আশপাশে। আরও বলা হচ্ছে, মৃতদের মধ্যে ৭৫ শতাংশেরই কোনও না কোনও অসুখ ছিল। হয় হার্টের অসুখ, কারও আবার ডায়াবেটিস, কেউ ভুগছিলেন টিউমারে। ফলে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের বেশিরভাগই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
জিয়াও বলছেন, ধীরে ধীরে এই মৃত্যুহার কমে আসবে বলে তারা আশাবাদী। চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত দুইজন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে, গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।
Advertisement
এদিকে, জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রমোদতরীতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এই ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ২৭৩ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা মাত্র ৩১টি ফলাফলের মধ্যে। প্রমোদতরীটিতে মোট যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৭শ।
হংকংয়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে অন্তত ১৭ জন। এ কারণে শহরটির সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ২৪টি দেশে ১৭৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো চীনগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।
Advertisement
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস।
টিটিএন/পিআর